আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের কাছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিপ্লবে কমপক্ষে শত শত বাংলাদেশি শহীদ হয়েছেন এবং ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
জবাবে প্রখ্যাত ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজ্ঞ করিম খান বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই হেগভিত্তিক আইসিসিতে অভিযোগ করতে পারে। তবে এ ধরনের মামলার জন্য যথাযথ নিয়মাবলি অনুসরণ করতে হয়।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন করিম খান। এ সময় তিনি ড. ইউনূসকে আইসিসিতে রোহিঙ্গা নির্যাতন মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। করিম খান জানান, তিনি এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ সফর করবেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নতুন গতি আনতে অধ্যাপক ইউনূসের তিন দফা প্রস্তাবের প্রশংসা করেন।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে– সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জাতিসংঘপ্রধানের একটি জরুরি সম্মেলন আয়োজন ও করণীয় প্রস্তাব, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট নিরসনে যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা জোরদার এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে আন্তরিক আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা। করিম খান বলেন, ‘এ তিন দফা যথার্থ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পূর্ণ সমর্থন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত। জাতিসংঘের আবাসিক টিম ড. ইউনূসকে সহায়তা করতে চায়। গুতেরেস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন শেখ হাসিনার নির্মম স্বৈরাচারের অবসান ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরেছি কারণ, তরুণরা নতুন বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর এর প্রভাব, রোহিঙ্গা সংকট এবং গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তদন্তে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান মিশনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্ব কামনা
বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্ব চেয়েছেন ড. ইউনূস। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংলাপে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি এখানে আপনাদের কথা শুনতে এসেছি এবং আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ চাই। আমাদের এই নতুন যাত্রায় আপনাদের অংশীদারিত্ব চাই।
এ সংলাপের আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ শুধু ১৭ কোটি মানুষের উদীয়মান বাজার নয়। এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ভোক্তা বাজারের একটি হিসেবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনের ৩০০ কোটি মানুষের বাজার ধরার সম্ভাবনাময় জায়গায় রয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো দেশই সমস্যামুক্ত নয়। বাংলাদেশও সমস্যামুক্ত নয়। তবে আমি একটি বিকাশমান বাংলাদেশ দেখি, যে দেশটি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি, আপনাদের কিছু কোম্পানি মুনাফা দেশে ফেরত পাঠাতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্পষ্টভাবে বললে, গত কয়েক বছর ধরে আমরা একটি বৈদেশিক হিসাব ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের সরকার এখন এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর হ্রাস না পায়।
অনুষ্ঠানে ইউএসবিবিসির সভাপতি অতুল কেশাপ বক্তব্য দেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিপ্পো। এ সময় তারা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। গ্র্যান্ডি সংকট মোকাবিলায় একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে থাকা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার দুর্দশা অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বেশি কিছু করা উচিত।
অধ্যাপক ইউনূস সংকটের দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করার এবং বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে বেড়ে ওঠা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি কিছু করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘খুব দেরি হওয়ার আগেই আমাদের এর সমাধান করতে হবে।
আইএলও মহাপরিচালক গিলবার্ট হুংবোও রে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশে আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে জাতিসংঘের শ্রম সংস্থার সহায়তার প্রস্তাব দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শ্রম সংস্কার তাঁর সরকারের একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। কেননা তাঁর সরকার এটিকে বাংলাদেশকে বিশ্বমানের উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার মূল বিষয় হিসেবে দেখে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post