কুষ্টিয়ার ভাইরাল রবিজুল নিয়ে যেন আলোচনা শেষ নেই। একই ছাদের নিচে ৭ স্ত্রী নিয়ে বসবাস করা ঘটনা মাঝে মধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে।
মাস চারেক আগে ৬ষ্ঠ স্ত্রী স্বেচ্ছায় সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে গেলেও এবার দুই স্ত্রীকে নিয়ে ফের আলোচনার টেবিলে রবিজুল।
স্থানীয় মাতব্বররা ইসলামী শরীয়াহ মতে ৪ স্ত্রীর অধিক বিয়ে জায়েজ নয় মর্মে ফতোয়া জারি করেন। একইসঙ্গে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় তাকে।
শনিবার (৮ জুন) সকাল ১০টায় স্থানীয় ২২ মাতব্বরের সমন্বয়ে এমন কড়া সিদ্ধান্ত আসে। পরে দুই স্ত্রীকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বৈঠকে দুই স্ত্রী ও তাদের স্বামী রবিজুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান মাতব্বর নাজিম মন্ডল।
রবিজুল বলেন, আমি আমার স্ত্রীদের খুব ভালোবাসি। তাদের সংসারে পাঁচটি সন্তানও রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আজীবন একসঙ্গে থাকতে চাই। কোনো ষড়যন্ত্রকারী ও প্রভাবশালী আমাদের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। জীবন দিয়ে হলেও তাদের রক্ষা করব।
সবার সম্মতিতে সাতটি বিয়ে করলেও সুখেই সংসার করছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বররা আমাদের বিয়েকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। চারটির অধিক স্ত্রী রাখতে পারব না মর্মে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত শনিবার হঠাৎ আমার পঞ্চম এবং সপ্তম স্ত্রীকে তলব করেন মাতব্বররা। পাটিকাবাড়ি বাজারে ভরা মজলিসে তারা আমাকে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন। চাপে পড়ে তারা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার সব স্ত্রীর পরিবারই অত্যন্ত গরিব। তারা আমার সঙ্গে সুখেই সংসার করছিল। দুদিন অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছে। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয় তারা।
স্বামীর কাছে ফিরতে এবং একই সঙ্গে প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় অভিযোগও করেন। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ইবি থানা পুলিশ তাদের আমার কাছে নিয়ে আসে। তারা এখন আমার বাড়িতেই সংসার করছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় লিটন মন্ডল ও আওয়ামী লীগ নেতা সফর উদ্দিনসহ মাতব্বররা আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। তাদের কঠোর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে আলোচনায় আসা দুই স্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। স্বামী রবিজুল আমাদের অনেক ভালোবাসেন। সম্মানের সঙ্গে সংসার করছি। কোনো পরিস্থিতিতে কেউই আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমরা সবাই বোনের মতো একসঙ্গে সংসার করছি।
অন্যদিকে রবিজুলের দুই স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকের প্রধান নাজিম মন্ডল বলেন, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই।
সামাজিকভাবে বসে আমরা তাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। রবিজুল তার দুই স্ত্রীকে তালাক দেবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন। আমরা তাকে বাধ্য বা মারধর করিনি।
বৈঠকে উপস্থিত পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই স্ত্রী মেনে নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।
একাধিক বিয়ের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়ার উপপরিচালক হেলাল উজ জামান বলেন, শরীয়াহ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে বৈধভাবে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারেন।
এ জন্য আগের সব স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। দাম্পত্য জীবনে সব স্ত্রীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো স্ত্রী গ্রহণের বিধান নেই।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতার বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু জোর জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন থেকে দুজন নারী জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন।
এমনকি শারীরিকভাবেও তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। স্থানীয় কিছু মানুষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন তারা। তাদের চাওয়া বাড়িতে স্বামীর সংসারে যেতে চান। এ বিষয়ে রোববার (৯ জুন) রাতেই তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা ভালো আছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় মাতব্বরের সমন্বয়ে সেই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন, লিটন মন্ডল, মাজিলা দারুস সুন্নাহ বহুমুখী মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলনা মুফতি আলমগীর হোসাইন, পাটিকাবাড়ী বায়তুল আমান জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মীর শফিকুল ইসলাম, পাটিকাবাড়ী হেফজখানা ও বহুমুখী মাদরাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান, মাজিলা পশ্চিমপাড়া দারুলউলুম হাফিজীয়া ক্বারিয়ানা মাদরাসার মুহতামিম কারি মশিউর রহমান প্রমুখ।
বৈঠকে শরিয়াহ অনুযায়ী চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামী ব্যাখা দেন মুহতামিম হাফেজ মুফতি আলমগীর হোসাইন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post