কাজ পাগল একজন সরকারি সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা। দায়িত্বে থাকাকালীন একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে সবসময়ই খবরের শিরোনামে ছিলেন তিনি। করোনাকালীন সময়েও তিনি তার কাজ থেকে পিছপা হননি। নিজের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে দুই দুইবার আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। এরপরেও থমকে যাননি তিনি। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন মানুষের কল্যানে কাজ করতে। বলছিলাম র্যাবের সেই আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের কথা।
২০২০ সালের রমজান মাসে বেশ কয়েকটি ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে নিয়মিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সারোয়ার আলম। সর্বশেষ হাজী সেলিমপুত্র ইরফান সেলিমকে মদ্যপ অবস্থায় গ্রেফতার ছিল তার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তবে তার সর্বশেষ অভিযানের পরই গত বছরের ০৯ অক্টোবর তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
নতুন কর্মস্থলে এসে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সরকারের গুণী এই কর্মকর্তা। শুক্রবার (২৮-মে) অফিস বন্ধ থাকলেও নিজেই প্রবাস টাইমে কল দিয়ে জেনে নেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের সমস্যার কথা। বিশেষকরে সৌদিগামী প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে তিনি বারবার খোজ নেন এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। এসময় প্রবাস টাইমের পক্ষথেকে ওমানের ফ্লাইট প্রসঙ্গ সহ ওমান প্রবাসীদের নানা সমস্যার কথা তাকে জানানো হয়।
অবশেষে শনিবার (২৯-মে) প্রবাসীদের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশ গমনেচ্ছু, কর্মরত ও প্রত্যাগত কর্মীরা নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন।
ফ্লাইট বন্ধ, দেশে এসে আটকেপড়া সহ নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে দেশে অবস্থানকালে ভিসাসংক্রান্ত বা অন্যান্য জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই প্রবাসী কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক আরিফ আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবেক র্যাবের নির্বাহী পরিচালক মো. সারওয়ার আলম, বিএমইটির ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার, সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম ভূঞা, উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল কাদের ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
মন্ত্রণালয়ের এই টিমের বিষয়ে প্রবাসীরা দারুণ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন প্রবাস টাইমকে। এ বিষয়ে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক মাইগ্রেশনের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “প্রবাসী কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। আশা করছি প্রবাসীদের কল্যাণে অনেক বেশি কাজ করবে এই টিম।”
উল্লেখ্যঃ সারোয়ার আলম প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ফার্মগেটে ওভার ব্রিজ বাদ দিয়ে যারা সড়কে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন তাদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করেছিলেন তিনি। তার আলোচিত অভিযানের মধ্যে অন্যতম ছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফকিরাপুলে ক্যাসিনোতে অভিযান।
এ ছাড়াও ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযান চালান তিনি। এ সময় ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অবৈধ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এরপর যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযানে যায় র্যাব। সেখানেও ছিলেন সারোয়ার আলম। অভিযানে তার কার্যালয়ে তল্লাশি করে অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ এক কোটি ৮০ লাখ, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন তিনি।
২০১৮ এবং ২০১৯ সালে হাসপাতালে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অভিযোগে বেশ কয়েকটি বড় বড় হাসপাতালে অভিযান চালান তিনি। এর মধ্যে পান্থপথের বিআরবি হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পাইন হাসপাতালকে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
নানা অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালকেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। সারোয়ার আলমের এমন সাফল্যের জন্য ২০১৯ সালের ১২ মে তার মাকে ‘গর্বিণী মা’ পদক পরিয়ে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post