প্রবাস থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে বাংলাদেশ সরকার রেমিট্যান্স হিসেবে বৈধতা দেয়। কিন্তু রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট দিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে একদিকে যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা, অন্যদিকে দেশ হারাচ্ছে রাজস্ব। এমন পরিস্থিতিতে, দ্রুত এর সমাধানের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অমূল্য, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই। দীর্ঘদিন পরিবার পরিজনের কাছ থেকে দূরে থেকে পাঠানো প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ যেমন পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলে, তেমন এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিশেষ অবদান রাখে।
প্রবাসীরা কেউ বাংলাদেশে তাদের নিজেদের অ্যাকাউন্টে, কেউ তাদের মা-বাবা কিংবা পরিবারের অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। বিদেশ থেকে পাঠানো এ অর্থ দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে বাংলাদেশ সরকারও রেমিট্যান্স হিসেবে এর বৈধতা দিয়ে থাকে। তবে প্রবাসীরা ভোগান্তিতে পড়েন দেশে তাদের ব্যাংকে জমানো টাকার রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট চাইতে গিয়ে।
প্রবাসীদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সভাপতি এবং সময় টিভির প্রতিনিধি মঈন উদ্দিন সরকার সুমন বলেন, ‘অনেক প্রবাসী দেশে বাড়ি-গাড়ি সব করেছেন প্রবাস জীবনের আয় দিয়ে। কিন্তু দেশে গিয়ে আয়কর ফাইল খুলতে গিয়ে ব্যাংক থেকে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে আর আয়কর ফাইল করেন না অনেকে। প্রত্যেক প্রবাসীর দেশে নিজের বা আত্মীয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কোনো না কোনো ব্যাংকে। প্রবাস জীবনের সকল আয় ঐ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেই পাঠিয়ে থাকেন।’
মঈন উদ্দিন সরকার সুমন আরও বলেন, ‘এখন বিদেশ থেকে পাঠানো প্রবাসীর টাকার হিসাব ব্যাংক দেবে। কারণ ব্যাংকে টাকা পাঠায় এবং ব্যাংক প্রতিবছর অ্যাকাউন্ট থেকে এসবের চার্জও কাটে। কিন্তু ব্যাংক রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট দেবে না। কেন দেয়নি জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন অন্য ব্যাংক ভায়া হয়ে টাকা জমা হওয়ায় অ্যকাউন্ট যে ব্যাংকে সেই ব্যাংক রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট দিতে নারাজ।’
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সভাপতি বলেন, ‘বিদেশে থেকে টাকা পাঠাতে গেলে প্রবাসীরা কুয়েতে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে দিনারের বিপরীতে টাকার মূল্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে ভিন্ন রেট পেয়ে থাকেন। যে এক্সচেঞ্জ দিনারের বিপরীতে টাকার মূল্য বেশি দেয় সেখান থেকেই বেশিরভাগ প্রবাসী দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। কুয়েতের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ দিনারের বিপরীতে বাংলাদেশে যে ব্যাংক টাকা বেশি দেয়, সেই দ্বিতীয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে।’
‘যেমন কুয়েত থেকে দেশে এক্স ব্যাংকে কোনো প্রবাসী তার নিজের অ্যাকাউন্ট অথবা তার আত্মীয়-স্বজনের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে কুয়েতে কোনো একটি মানি এক্সচেঞ্জে গেলেন। এক্সচেঞ্জে গিয়ে ওই প্রবাসী দেখলেন সরাসরি এক্স ব্যাংকে টাকা পাঠালে কুয়েতের এক দিনারের বিপরীতে তিনি পাবেন ৩৯০ টাকা। অথচ দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে ওয়াই ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে কুয়েতের এক দিনারের বিপরীতে পাবেন ৪০০ টাকা। তিনি প্রবাসীরা বেশি মূল্য পেয়েছেন সেভাবেই পাঠিয়েছেন। এক্সচেঞ্জ থেকে দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে ওয়াই ব্যাংকের মাধ্যমে ভায়া হয়ে রেমিট্যান্স হিসেবে ওই প্রবাসীর অ্যাকাউন্টে তা জমা হয়। যেভাবেই পাঠাক না কেন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাঠালে বৈধ এবং রেমিট্যান্স হিসেবে ওই প্রবাসীর অ্যাকাউন্টে তা জমা হয়।’ যোগ করেন এই প্রবাসী সাংবাদিক।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মঈন উদ্দিন সরকার সুমন বলেন, ‘এক্স ব্যাংক থেকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট তোলা হলে সেখানেও দিন, তারিখ এবং টাকার পরিমাণসহ কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি হিসেবে কুয়েত থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে সেটা স্পষ্ট লেখা থাকে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাইলে সহজেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয়। কোনো কারণে ওই প্রবাসী রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট চাইলে শুরু করে গড়িমসি। তখন তাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, আপনার টাকা আসছে ওয়াই ব্যাংকের মাধ্যমে, আপনি রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট তুলতে ওয়াই ব্যাংকে যান।’
দেশে ব্যাংকে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট চাইতে গেলে প্রবাসীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। এই হয়রানি থেকে মুক্তি চায় তারা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, প্রবাস জীবনে তারা দেশে যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান, সেই ব্যাংক সব তথ্য দেবে। তারা কেন টালবাহানা করে?
এদিকে, রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে অনেক প্রবাসীই টিন সার্টিফিকেট থাকা সত্যেও আয়কর রিটার্ন দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে প্রতি বছর দেশও বড় একটি অংশের রাজস্ব হারাচ্ছে বলে মনে করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবাসী সাংবাদিক মঈন সুমন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post