মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিল রেখে ফিলিস্তিনেও পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরের দিনেও ইসরায়েলি বোমারু বিমান ঝাঁকে ঝাঁকে এসে গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করছে। ফিলিস্তিনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার খুব ভোরে গাজা উপত্যকার অধিবাসীরা যখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন থেকেই ইসরায়েলি বিমানগুলো বোমাবর্ষণ শুরু করে। এভাবে বোমা হামলার মধ্য দিয়েই ফিলিস্তিনে শুরু হয় ঈদের সকাল।
সাফওয়াত আল-কাহলুত নামে এক ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, বোমা বর্ষণের কারণে বুধবার রাত থেকেই গাজা জেগে (ঈদের জন্য জাগতে হয়নি) আছে। কিছু সময় পর পর বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, আর ভবনগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে।
ঈদের নামাজ আদায় করছেন ফিলিস্তিনিরা | ছবিঃ সংগৃহীত
ঈদের সকালে ইসরায়েলের হামলায় গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকায় রিমা তেলবানী নামে এক গর্ভবতী নারী এবং তার শিশু সন্তান নিহত হয়েছে। এছাড়া গাজার শেখ জায়েদ এলাকার একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় প্রবীণ এক দম্পতি ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যান।
সংবাদ সংস্থা আল সাফা জানায়, বৃহস্পতিবার হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম বিগ্রেডের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা ইসরায়েলজুড়ে আমাদের প্রতিরোধ সম্প্রসারিত করেছি। ফিলিস্তিন রক্ষায় আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। এদিকে, ফিলিস্তিনের স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আল জাজিরাকে জানিয়েছে, অব্যাহত বোমা হামলায় ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে আল জাজিরার হিসেবে, অন্তত ৬৯ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১৭ শিশু ও ৮ নারী রয়েছে।
ঈদের নামাজ আদায় করছেন ফিলিস্তিনিরা | ছবিঃ সংগৃহীত
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল জেরুজালেমে। গত রোববার (৯ মে) লাইলাতুল কদরের রাতে আল আকসায় নামাজ আদায় শেষে ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ শুরু করলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়।
সংঘর্ষের পর থেকে আল আকসা মসজিদ ও তৎসংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখে ইসরায়েলি পুলিশ। এর জেরে আল আকসা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে হুঁশিয়ারি দেয় হামাস। কিন্তু ইসরায়েল ওই হুমকিকে আমলে না নিলে ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। তারপর থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তেল আবিবের পক্ষে অবস্থান নিলেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সহমর্মিতা জানিয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন মার্কিনরা। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
বিবিসি জানায়, ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন জর্ডানের সাধারণ মানুষ। টানা চতুর্থ দিন বুধবার রাজধানী আম্মানে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় ইসরায়েলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা। ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের শান্তি চুক্তি বাতিলেরও দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা জানান জর্ডানের মানুষ।
ঈদের নামাজ আদায় করছেন ফিলিস্তিনি নারীরা | ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আরোপিত কারফিউ উপেক্ষা করে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নেমে আসেন তুর্কিরা। ইসরায়েলি কনস্যুলেটের সামনে অবস্থান নিয়ে তেল আবিবের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি জানান আন্দোলনকারীরা।
গাজায় হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তেল আবিবের পক্ষে অবস্থান নিলেও সাধারণ মার্কিনরা গাজার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ইসরাইলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরে সমাবেশ হয়। ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয় ফ্রান্সের প্যারিসেও। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশেই ওই বিক্ষোভ হয়। এ ছাড়া সার্বিয়ার বেলগ্রেডে গাজায় সহিংসতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান দেশটির সাধারণ মানুষ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post