ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইতোমধ্যে গোষ্ঠীটি তার শীর্ষ কমান্ড গঠনের কাজও শুরু করেছে। গোষ্ঠীটির দু’টি উচ্চপর্যায়ের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে।
ইরানের প্রত্যক্ষ মদত ও সমর্থনে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ তার জন্মলগ্ন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দশকগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ছোটো আকারের সংঘাতে জড়ালেও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলা ও তার জবাবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ইসরায়েল ও হিজুবুল্লাহকে বড় যুদ্ধের মুখোমুখী করে তোলে।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। হিজবুল্লাহর প্রধান কমান্ড কেন্দ্রসহ গোষ্ঠীটির গুরুত্বপূর্ণ সব সামরিক স্থাপনার অবস্থান এ অঞ্চলেই। ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে দক্ষিণ লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দিতে থাকে ইসরায়েলও। উভয়পক্ষের সংঘাতে লেবানন ও ইসরায়েলে গত এক বছরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অভিযানে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ প্রায় সব শীর্ষ কমান্ডার। এক কথায়, ১০ দিনে হিজবুল্লাহর হাইকমান্ড ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েরের বিমানবাহিনী। ১ অক্টোবর থেকে অভিযানে অংশ নিয়েছে স্থল বাহিনীও।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে গোষ্ঠীটি। প্রসঙ্গত, হিজবুল্লাহর অস্ত্র-গোলাবারুদের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। এই গোষ্ঠীটির বেশ কিছু প্রিসিশন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলায় ২৭ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহর প্রধান কমান্ড সেন্টার ধ্বংস হয় এবং হাসান নাসরুল্লাহও নিহত হন সেদিনই। কিছুদিন আগে নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হাশেম সাফিউদ্দিন নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার জানিয়েছেন, নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে নতুন একটি কমান্ড সেন্টার স্থাপন করেছে গোষ্ঠীটি। ১ অক্টোবর থেকে সেটি কার্যকরও রয়েছে।
হিজবুল্লাহর একজন মধ্যমসারির ফিল্ড কমান্ডার জানিয়েছেন, আগে গোষ্ঠীটির মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ের যোদ্ধাদের জন্য যেসব কঠোর বিধিনিষেধ ছিল, নাসরুল্লাহ ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর থেকে তা অনেকটাই শিথিল পর্যায়ে রয়েছে। বস্তুত, হিজবুল্লাহর একজন ফিল্ড কমান্ডার আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন— নাসরুল্লাহর সময়ে এটি রীতিমতো অসম্ভব ছিল।
এছাড়া বর্তমান কঠিন সময়ে টিকে থাকতে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হিজবুল্লাহ, যা আগে কখনও নিতে হয়নি গোষ্ঠীটির। যেমন বর্তমানে কারা আসলে হিজবুল্লাহর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তা এমনকি গোষ্ঠীটির মধ্যমপর্যায়ের কমান্ডারদের কেউই জানেন না। তাছাড়া হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কিংবা ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। ল্যান্ড ফোনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন তারা। এই ল্যান্ডফোন নেটওয়ার্ক গোষ্ঠীটির নিজেদের তৈরি এবং এটি এখনও ইসরায়েলি হামলা থেকে অক্ষত রয়েছে।
ইসরায়েলের থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা আলমার বিশ্লেষক ও কর্মকর্তা আভরাহাম লেভিন রয়টার্সকে বলেন, আইডিএফের হামলায় শুধু হিজবুল্লাহর হাই কমান্ড তছনছ হয়েছে, গোষ্ঠীটির অস্ত্রভাণ্ডার, যোদ্ধাবাহিনী ও অন্যান্য সক্ষমতায় কিন্তু এ অভিযানের তেমন প্রভাব পড়েনি।
হিজবুল্লাহ খুব ভালো করেই জানে যে তাদের যে অস্ত্রভাণ্ডার ও যোদ্ধাবাহিনী রয়েছে, তা দিয়ে অনায়াসে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে। তারা এ ও জানে যে ইরান তাদের পাশে রয়েছে। ফলে অস্ত্র-গোলাবারুদের সংকট তাদের আপাতত হবে না।
অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। হিজবুল্লাহ এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সামরিক গোষ্ঠী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post