মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা ঘনিয়ে আসায় ভারতের বৃহৎ করপোরেট গোষ্ঠীগুলোর ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ দুই দেশে ভারতের ১৪টি কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। ইতিমধ্যে ভারতের শেয়ারবাজারে যুদ্ধের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। এরপর সংঘাত আরও তীব্র হলে ওই কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
লেবাননে ইসরায়েলের হামলা এবং তার জেরে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে এখন যুদ্ধের দামামা বাজছে। ইতিমধ্যে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন আরও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গেই ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বেশ পুরোনো। কয়েক বছরে ইসরায়েলের সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ফলে ইসরায়েল ও ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে এ দুই দেশে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যও স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ।
ইরান-ইসরায়েলে ভারতের যেসব শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আদানি গ্রুপের আদানি পোর্টস, ওষুধ কোম্পানি সান ফার্মা, গয়না প্রস্তুতকারী কল্যাণী জুয়েলার্স ও টাটা গোষ্ঠীর টাইটান। এ ছাড়া বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রো, টিসিএস ও টেক মাহিন্দ্রার বিপুল বিনিয়োগ আছে ইসরায়েলে।
ভারতের শেয়ারবাজার সূত্রে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এসব কোম্পানির স্টকের দাম গড়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। শুক্রবার, অর্থাৎ ভারতের শেয়ারবাজারের সর্বশেষ কর্মদিবসে আদানি পোর্টসের শেয়ারের সর্বশেষ দাম ১৫ রুপি ২০ পয়সা কমেছে, যা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের সমান।
ইসরায়েলের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রবন্দর হাইফার বড় অংশীদারি আছে আদানি পোর্টসের। এ ছাড়া ইসরায়েলের ওষুধ কোম্পানি ট্যারো ফার্মাসিউটিক্যালসে সান ফার্মার বিনিয়োগ আছে; এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ।
শুক্রবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় সান ফার্মার শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১৯০৭ দশমিক ৯৫ রুপি; অর্থাৎ প্রায় ৩ টাকা কমেছে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম। ইসরায়েলি সংস্থা তেভা ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ভারতের ড. রেড্ডিস ও লুপিনের মতো কোম্পানির। এসব কোম্পানির স্টকেরও বড় পতন হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভারতের শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা।
পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের কল্যাণী জুয়েলার্সের গয়নার ভালো চাহিদা আছে; যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে যার শেয়ারের দাম ৭১৩ রুপিতে নেমে এসেছে। এই কোম্পানির শেয়ারের দাম আড়াই শতাংশের বেশি কমেছে। লোকসানের আশঙ্কা আছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই), লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (এল অ্যান্ড টি), এশিয়ান পেইন্টস ও বার্জার পেইন্টসের।
এটা তো গেল প্রত্যক্ষ ক্ষতির বিষয়, এর সঙ্গে আছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরপথে চলাচলকারী জাহাজে হামলা চালায়। তার জেরে অনেক জাহাজ এখন উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে চলাচল করছে।
হুতিদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সম্পর্ক গভীর। এ পরিস্থিতিতে হুতিরা লোহিত সাগরপথে চলাচলকারী জাহাজে হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এমনকি তারা নতুন করে হামলা না চালালেও অনেক জাহাজ এ পথ এড়িয়ে চলবে।
এ বাস্তবতায় বিশ্ববাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার প্রভাব নিঃসন্দেহে ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশেও পড়বে।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post