প্রশাসনে উপসচিব পদে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় পদোন্নতি দিল সরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তিন শতাধিক সফল অভিযানের ট্যাগ লাগানো র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের পদোন্নতি মেলেনি।
প্রশাসনে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে গত রোববার (৭ মার্চ) পদোন্নতি পান ৩৫৮ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৩৩৭ জনকে পদোন্নতি দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতি পাওয়া বাকি কর্মকর্তারা শিক্ষা ছুটিতে আছেন। তাদের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও নিয়মানুযায়ী প্রত্যেককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, ৩৫৮ জনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৮ জন রয়েছেন। তাদের (২৭৮ জন) মধ্যে ২৭তম ব্যাচের ২৪০ জন (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) আছেন। বাকি ৩৮ জন অন্যান্য ব্যাচের। এছাড়া অন্যান্য ক্যাডার থেকে মোট পদোন্নতি পেয়েছেন ৮০ কর্মকর্তা।
বিসিএস ২৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সারোয়ার আলম। ২০১৪ সালের ১ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সে অনুযায়ী এ পদে প্রায় সাত বছরসহ মোট ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি, যা পদোন্নতির শর্ত পূরণ করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় অভিযোগ নেই। বরং নানা সাহসী অভিযানের কারণে বিভিন্ন সময় প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই কর্মকর্তা। তবুও তার পদোন্নতি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন অনেকে। একইসঙ্গে কেন পদোন্নতি পাননি, সে প্রশ্নও উঠেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য নিয়মিত হিসেবে ২৭তম ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত রোববার পদোন্নতি দেওয়া হলেও এ ব্যাচের প্রায় ৩০ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমও রয়েছেন।
‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’ অনুযায়ী, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ১০০ নম্বরের (মূল্যায়ন) মধ্যে অন্তত ৮৩ নম্বর পেতে হবে।
আমার জানা মতে যারা যোগ্য তারা সকলেই পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকিদের বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। কারণ পদোন্নতি আমরা দেই না। পদোন্নতি দেওয়ার জন্য যে বোর্ড (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) আছে, তারা সবকিছু বিশ্লেষণ করে যারা যোগ্য তাদের পদোন্নতি দিয়েছে বলেই আমি জানিআনিছুর রহমান মিঞা, অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগ
শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ২৫ নম্বর, বিগত পাঁচ বছরের বার্ষিক বা গোপনীয় প্রতিবেদনের ওপর গড়ে ৩০ নম্বর, চাকরিজীবনের শুরু থেকে বিগত পাঁচ বছরের আগ পর্যন্ত সব বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের জন্য গড়ে ২৫ নম্বর, সামগ্রিক চাকরিজীবনে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকলে বোনাস নম্বর হিসেবে ১০ নম্বর এবং সামগ্রিক চাকরিজীবনে কোনো শাস্তি না থাকলে ১০ নম্বর মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের মাধ্যমে উপসচিব পদে পদোন্নতির মূল্যায়ন হয়।
বিসিএস ২৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সারোয়ার আলম। ২০১৪ সালের ১ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সে অনুযায়ী এ পদে প্রায় সাত বছরসহ মোট ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি, যা পদোন্নতির শর্ত পূরণ করে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় অভিযোগ নেই। বরং নানা সাহসী অভিযানের কারণে বিভিন্ন সময় প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই কর্মকর্তা। তবুও তার পদোন্নতি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন অনেকে। একইসঙ্গে কেন পদোন্নতি পাননি, সে প্রশ্নও উঠেছে।
পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমার পদোন্নতি হয়নি বলে অনেক সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি পদোন্নতি পাওয়া অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা অবাক হয়েছেন। তবে এটাই বাস্তবতাসারোয়ার আলম
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার জানা মতে যারা যোগ্য তারা সকলেই পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকিদের বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। কারণ পদোন্নতি আমরা দেই না। পদোন্নতি দেওয়ার জন্য যে বোর্ড (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) আছে, তারা সবকিছু বিশ্লেষণ করে যারা যোগ্য তাদের পদোন্নতি দিয়েছে বলেই আমি জানি।’
পদোন্নতি না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সরাসরি কিছু বলেননি ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তবে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমার পদোন্নতি হয়নি বলে অনেক সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি পদোন্নতি পাওয়া অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা অবাক হয়েছেন। তবে এটাই বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, আমি সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছি। যেসব জায়গায় জনগণ প্রতারিত হচ্ছিল, সেগুলো ধরে ধরে কাজ করে মানুষের মনে স্থান করতে পেরেছি। সততা, কর্মদক্ষতা কোনোদিক দিয়েই পিছিয়ে ছিলাম না। আমার প্রমোশন হয়নি, এটা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
চাকরিজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকরিজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়সারোয়ার আলম
গত সোমবার (৮ মার্চ) ফেসবুকে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দেন সারোয়ার আলম। সেখানে তিনি লেখেন, ‘চাকরিজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকরিজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়!’
নেপথ্যে কি হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান?
প্রশাসনের অনেকেই বলেছেন, ২০২০ সালের অক্টোবরে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সে সময় ইরফান সেলিমকে দুটি অভিযোগে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন সারোয়ার আলম। এটিই কি পদোন্নতি না পাওয়ার পেছনে কাল হলো তার?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযানের আগের দিন রাত থেকেই ইরফান সেলিমের চকবাজারের বাসায় সাদা পোশাকে অবস্থান নেয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, র্যাব এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। দুপুরে ভবনটিতে প্রবেশ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। আলামতগুলো নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ একাট্টা করে সাজা দেন। অভিযানে যাওয়ার আগে এবং অভিযান চলাকালে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহল থেকে অভিযানের বিষয়ে তিনবার ফোন করে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। তাই ওই অভিযানের সঙ্গে সারোয়ার আলমের পদোন্নতি না পাওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সারোয়ার আলমের আলোচিত অভিযান
২০১৫ সাল থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সারোয়ার আলম। তবে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ফার্মগেটের ওভারব্রিজ বাদ দিয়ে সরাসরি যারা রাস্তা পার হচ্ছিলেন, তাদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করেছিলেন তিনি।
তার পরিচালিত অভিযানের মধ্যে অন্যতম হলো- ২০২০ সালে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলের বাসায় অভিযান, রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরির বিরুদ্ধে অভিযান এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফকিরাপুলে ক্যাসিনোর আসরে অভিযান।
রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরির বিরুদ্ধে অভিযানটি দেশব্যাপী আলোচিত হয়। যেদিন অভিযানটি চলছিল সেদিনই যমজ সন্তানের বাবা হন সারোয়ার আলম। হাসপাতালে স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। সন্তান হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পরই চলে যান রিজেন্ট হাসপাতালে। শুরু করেন অভিযান।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযান চালান তিনি। ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অবৈধ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নিকেতনে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযানে যায় র্যাব। সেখানেও ছিলেন সারোয়ার আলম। অভিযানে জি কে শামীমের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাতিরপুলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নকল করে বাংলাদেশে উৎপাদনের কারখানায় হানা দেন সারোয়ার আলম। হাতেনাতে ধরে সিলভান ট্রেডিং কোম্পানি ও টোটাল ফার্মাকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা এবং দুজনকে জেল দেন তিনি।
কুকুর ও পশুর মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন
২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ফকিরাপুলের একটি ভবনে গিয়ে কুকুরসহ অন্যান্য পশুর মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন বিক্রির চিত্র ধরা পড়ে তার চোখে। অভিযানে গিয়ে দেখেন, ২০১২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া জলাতঙ্ক, বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিন ২০১৯ সালে কুকুরের দেহে দেওয়ার অভিনব প্রতারণার চিত্র। সব যাচাই-বাছাই করে অ্যাডভান্স অ্যানিম্যাল সায়েন্স কোং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের ছয়জনকে জেল ও ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। জব্দ করেন আরও ১০ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।
ভয়ংকর কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত
ঢাকায় যখন বিভিন্ন কিশোর অপরাধী ও গ্যাংয়ের হাতে হত্যাকাণ্ড, চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায়, তখন তাদের শনাক্তে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। গত বছরের ৩১ জুলাই রাজধানীর শ্যামলী, শিশুমেলা, কলেজ গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৯ কিশোরকে আটক করে ছয় মাসের জন্য কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠান তিনি।
পশুর হাটে হানা
৯ আগস্ট গাবতলীর কোরবানির পশুর হাটে হানা দেন সারোয়ার আলম। হাতেনাতে ধরেন একজন পশু চিকিৎসককে। ওই চিকিৎসক গরু মোটাতাজাকরণ স্টেরয়েড ইনজেকশন দিচ্ছিলেন। ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
দুধে ভেজাল
২০১৯ সালের ৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে বারো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুড লিমিটেডে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। গিয়ে দেখেন, ১০০ লিটার দুধের সঙ্গে পানি, স্কিম মিল্ক পাউডার ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ২ হাজার ৮০০ লিটার পাস্তুরিত দুধ তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ ১২ জনকে কারাদণ্ড এবং ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা করে ফ্যাক্টরি সিলগালা করেন তিনি।
ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি
২০১৯ সালের জুলাই মাসে সারাদেশে যখন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু ও সিবিসি পরীক্ষায় ইচ্ছামতো ফি আদায় করতে থাকে। সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে অভিযান শুরু করেন সারোয়ার আলম। ৩১ জুলাই ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি নেওয়া এবং টেস্ট না করে প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট দেওয়ায় পল্টন ও ফকিরাপুল এলাকার চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাঁচজনকে জেল ও ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করে প্রতিষ্ঠান দুটি সিলগালা করেন সারোয়ার আলম।
উত্তরার নামিদামি হাসপাতালে অভিযান
২০২০ সালের ২৯ জুলাই উত্তরার ক্রিসেন্ট, আরএমসি ও লুবনা হাসপাতালে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। গিয়ে দেখেন, টেস্ট না করেই দেওয়া হয় মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ও কালচার টেস্ট রিপোর্ট। রিপোর্টের ফাঁকা পাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর দেওয়া। ভেতরে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সার প্যাথেড্রিন ৩৫০ টাকায়, ৪ টাকার ওষুধ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
ল্যাব আর অপারেশন থিয়েটারে পাওয়া যায় মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ও সার্জিক্যাল সামগ্রী। এসব কারণে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ১৭ লাখ, লুবনা হাসপাতালকে ২০ লাখ এবং আরএমসি হাসপাতালকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। ২৫ জুলাই ধোলাইপাড়ে কিউর জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন করার সময় এইচএসসি পাস দুই ভুয়া ডাক্তারকে আটক করেন তিনি।
আরো পড়ুনঃ
ওমান রুটে বিমানের এ কি হাল!
ভালো নেই বহুল আলোচিত সেই সরোয়ার আলম
পাসপোর্ট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ওমান প্রবাসীরা
ফেসবুক প্রতারণা থেকে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান
আরও যত অভিযান
২০১৯ সালে সিন্ডিকেট করে সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট কিনে হজযাত্রীদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন সারোয়ার আলম। মেয়াদোত্তীর্ণ কসমেটিকস বিক্রি করায় গুলশানের পারসোনা বিউটি পার্লার ও ফারজানা শাকিল বিউটি পার্লারকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
একই বছরের ২৭ মে গরুর মাংসে রং ব্যবহার করায় নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে অভিযানে গিয়ে জেল-জরিমানা করেন তিনি।
বিজিবির সীমান্ত স্কয়ারের ফুডকোর্টে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। গিয়ে দেখেন কাপড়ে ব্যবহার করা রং, আর সহস্র তেলাপোকা। জেল-জরিমানা করেন সংশ্লিষ্টদের।
নকল কসমেটিকসের বিরুদ্ধে চকবাজার, কেরানীগঞ্জ ও ডেমরা এলাকায় কমপক্ষে ১২টি অভিযান চালান সারোয়ার আলম।
বাদামতলী ও কারওয়ান বাজারে একাধিক অভিযান চালান তিনি। এ সময় কেমিক্যাল দিয়ে কাঁচা আম হলুদ করে বিক্রি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর বিক্রির চিত্র উঠে আসে সবার সামনে।
চাঁদাবাজ হাতি
২০১৯ সালের মে মাসে কাওরান বাজারে একটি অভিযান চালানোর সময় হাতি দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির চিত্র চোখে পড়ে সারোয়ার আলমের। তখনই দুই হাতি ও মাহুতকে থামার নির্দেশ দেন তিনি। তবে মাহুত না থেমে দৌড়াতে থাকেন, পেছনে দৌড়ান তিনিও। অবশেষে হাতিরঝিলে গিয়ে আটকান তাদের। দুজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন তিনি।
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে অভিযান
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ওই ঘটনার পর একের পর এক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল কারখানা সরানোয় অভিযান চালান তিনি।
অ্যাপোলো, ইউনাইটেড, পপুলারসহ নামিদামি হাসপাতালে অভিযান
২০১৮ ও ২০১৯ সালজুড়ে বড় বড় হাসপাতালে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট (রাসায়নিক উপাদান) ব্যবহার ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অভিযোগে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালকে ২০ লাখ টাকা, অ্যাপোলো হাসপাতালকে পাঁচ লাখ ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
এছাড়া একই অভিযোগে পান্থপথের বিআরবি হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পাইন হাসপাতালকে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন সারোয়ার আলম। নানা অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালকেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
সারোয়ার আলমের এমন সাফল্যের জন্য ২০১৯ সালের ১২ মে তার মাকে ‘গরবিনী মা’ পদক পরিয়ে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অসাধারণভাবে কাজ করে চলা সারোয়ার আলমকে ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলিয়া মেহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়। সুত্রঃ ঢাকা পোষ্ট
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post