সৌদি আরবে শীত পড়ে জানুয়ারিতে, আগস্ট আসতে আসতে অনুভূত হয় মরুভূমির তাপ; এরপরই তাপ কমতে থাকে। দেশটির ৬৬টি শহরের সবগুলোই ভীষণ বিচিত্র। কোনোটি বিশাল পাহাড় দিয়ে ঘেরা, কোথাও বা যেতে হলে পাড়ি দিতে হয় মরুভূমি, কোনোটি আবার সমুদ্রতীরে। কোনো কোনো জায়গা আবার গ্রীষ্মকালেও থাকে আরামদায়ক শীতল। এই তালিকায় আছে তাইফের মেঘাচ্ছন্ন উপত্যকা এবং আসির প্রদেশের ৩টি জায়গা।
তাইফ : চোখ বন্ধ করে একটি গোলাপ রাজ্য কল্পনা করুন; নানা রঙের গোলাপে ছেয়ে যাওয়া প্রান্তর আর বাতাসে গোলাপের মিষ্টি গন্ধ। কল্পনার এই রাজ্যের বাস্তব নাম তাইফ। সৌদি আরবের হিজাজ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শীতল এক জায়গা। গোলাপের স্বর্গরাজ্য এ শহরে আছে দুই হাজারেরও বেশি গোলাপ খামার। ফুলেল প্রকৃতির সঙ্গে এখানে মিলেছে অনন্য সব আরবীয় ইতিহাস।
আঁকাবাঁকা কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তা ধরে উঠে গেলে দেখা মিলে আল হাদাহ পাহাড়ের চোখ ধাঁধানো রূপ। ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে পারবেন ১৫শ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক হস্তশিল্প ও বাণিজ্যিক পটভূমি সউক ওকাজ। তাইফের উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী শুভ্রা প্যালেস জাদুঘর। শহুরে আমোদের একফাঁকে চলে যেতে পারেন সেখানকার স্ট্রবেরি বাগানে; চেখে দেখতে পারেন আরবীয় স্ট্রবেরির স্বাদ।
আভা : সৌদি আরবের আসির প্রদেশের রাজধানী আভা। পাহাড়ঘেরা এক শহর। সেজন্যই হয়ত আরবের গরম এখানটায় তেমন অনুভূত হয় না। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি পেরোয় না খুব একটা। অন্যদিকে পাহাড়ি বাতাসও শীতল। আর বছরজুরে বৃষ্টি তো আছেই। এমন সতেজ আবহাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারেন আভার আলবাস্তা জেলা ঐতিহ্যবাহী বাজার আর আসির জাতীয় উদ্যানে।
কোলাহল থেকে বিরতি চাইলে পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা হাইওয়ে ধরে যেতে পারেন লিওয়ান ফার্মে। ক্যাবল কারে চড়ে দেখে আসতে পারেন সৌদির সবচেয়ে উঁচু জাবাল সৌদা পাহাড়ের চূড়া। মেঘের ভেতরে হেঁটে বেড়ানোর জন্য আছে ফগ ওয়াকওয়ে। কিংবা যেতে পারেন আরজাশ আয়োজনে। আভার যে দিকেই যান আপনার মন ও চোখ দুই-ই জুড়াবে।
রিজাল আলমা : পাহাড়ের উপর প্রায় সাততলা সমান সারি সারি ধূসর কাদামাটির দালান; তাদের জানালার রঙ সাদা। চমৎকার সেগুলোর স্থাপত্যশৈলী। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা স্বীকৃত এই গ্রাম শুধু সৌদিতেই নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি পর্যটন গ্রাম। আভা থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটারের পথ রিজাল আলমা। অবস্থান আসির প্রদেশেই। রিজাল আলমায় ফুল-মানবদের বসবাস। মাথায় ফুলের টুপি পরে ফুল উৎসব উদ্যাপন করেন তারা। অভিযাত্রীরা অংশ নিতে পারেন সেই উৎসবে। কাসাবাত আল উস টাওয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে ডুবে যেতে পারেন আরবীয় গ্রামীণ সৌন্দর্যে। আর ৪০টি ভিন্ন স্বাদের মধু চেখে দেখতে চাইলে যেতে পারেন আল আমি মধু কুটিরে।
আল নামাস : জায়গাটির আরেক নাম, কুয়াশার শহর। এর অবস্থান সারাওয়াত পাহাড়ের চূড়ায়। আভা থেকে দুই ঘণ্টার পথ। কোলাহলমুক্ত সবুজ শহর আল নামাস। পাহাড়ি সতেজতা এর অন্যমত আকর্ষণ। সারা বছরই ঠান্ডা থাকে এখানকার আবহাওয়া।
পাহাড়ি ঝরনা, নৈসর্গিক প্রকৃতি, শান্ত পরিবেশ, অসাধারণ আতিথেয়তা, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ইতিহাস সংবলিত জাদুঘর, আর সবুজ উদ্যান, ইত্যাদি মিলিয়ে আল নামাস দেখার মতো এক জায়গা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post