ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতেই আছেন। এদিকে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা মহল থেকে দাবি উঠেছে।
মধ্য জুলায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে তা আগস্টে গিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রুপ নেয়। জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হলে সরকার তা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলির নির্দেশ দেয়। তাতে পিছু হটেনি আন্দোলনকারীরা। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যর্থ হওয়ার পর ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যায়। যদিও এর মধ্যে সরকার ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ৬৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ বিশ্লষণকারী সাইট দ্য কনভারশেসনে বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শতাধিক মামলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন, গুম, অপহরণ, মানবতা বিরোধী এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ। এখন গণহত্যার অপরাধে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দাবি উঠেছে। তবে ভারত হাসিনাকে ফেরত দেবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেছে ‘দ্য কনভারসেশন’। এতে বলা হয়েছে, ভারত শেখ মুজিবুর রহমানের দুই খুনিকে ফেরত দিয়েছে। চাইলে শেখ হাসিনাকেও ফেরত দিতে পারবে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়। এরপর অপরাধীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে ২০১৬ সালে চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। শেখ হাসিনা নিজেই এই চুক্তি করতে মরিয়া ছিল। কারণ ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত শেখ মুজিবুর রহমানের দুই হত্যাকারী ওই সময় ভারতে অবস্থান করছিল। হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার এ দুজনকে ফিরিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিল।
এ কাজে সফলও হয়েছিল শেখ হাসিনা। ২০২০ সালে শেখ মুজিবের মুজিবের দুই খুনিতে ফেরত দিয়েছিল ভারত। তারা হলেন সেনাবাহিনীর রিসালদার মোসলেউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদ। এরমধ্যে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অপরদিকে এই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিয়েছিল বাংলাদেশ।
দ্য কনভারসেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব অভিযোগের বিচার ভারতে করা যায়। যদি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। হাসিনার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোর শাস্তিও যথেষ্ট হবে। যার অর্থ হাসিনাকে ফেরত দেয়া যাবে। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে থাকা ১০ নম্বর শর্তের বিষয়টি আরও সহজ করে দিয়েছে। এই শর্তে বলা আছে, কারও বিরুদ্ধে শুধুমাত্র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেই তাকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এজন্য অপরাধীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো প্রমাণ দেখাতে হবে না। তবে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।
হাসিনার প্রত্যর্পণ কী সহজ হবে?
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে তাতে এও বলা হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো মামলা হলে কাউকে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। তাই এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে ভারত হাসিনাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
এছাড়া হত্যাচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ ও হত্যায় উস্কানি দেয়া অপরাধগুলো রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে না বলে ওই চুক্তিকে উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই এই ক্যাটাগরিতে পড়েছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে ভারত। তাহলে হাসিনাকে আর ভারত থেকে ফেরানো যাবে না। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যর্পর্ণ করা যায় না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post