ইলন মাস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থা স্টারলিংকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারে ব্রাজিলের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনাটেল। দেশটিতে এক্স (সাবেক টুইটার) নিষিদ্ধ হলেও স্টারলিংকের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করা যাচ্ছে বলে কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিল করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
শীর্ষ আদালত এক্স বন্ধের আদেশ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্টারলিংকের বিরুদ্ধে শাস্তির হুমকি দিয়েছে ব্রাজিলের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অ্যালেক্সান্দ্রে দে মোরায়াসের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। বিচারকের মতে, এক্স প্ল্যাটফরমটি ঘৃণাত্মক বার্তা এবং ভুল তথ্য ছড়িয়েছে যা ব্রাজিলের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
গত সোমবার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিয়েছে যে শুধু মাস্কের সম্পদের কারণে বিশ্বের কোনো দেশ তার প্রান্তিক মতাদর্শ সহ্য করতে বাধ্য নয়।’
গত সোমবার স্টারলিংক আবারও ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। কারণ তারা মোরায়েসের আদেশ অমান্য করেছে, যা সমস্ত ইন্টারনেট প্রদানকারীকে দেশীয়ভাবে এক্সের অ্যাকসেস ব্লক করতে নির্দেশ দেয়।
টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনাটেলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, স্টারলিংকের নিয়ম মেনে না চলার কারণে শাস্তি হিসেবে ব্রাজিলে এর কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
আনাটেল কমিশনার আর্থুর কোইম্ব্রা রয়টার্সকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্রাজিলের সমস্ত টেলিকম অপারেটরের পর্যবেক্ষণ করছে যেন মাস্কের ম্যাসেজিং প্ল্যাটফরম ব্রাজিলে বন্ধ থাকে।
কোইম্ব্রা বলেছেন, ‘স্টারলিংকই একমাত্র কোম্পানি, যা অ্যানটেলকে জানিয়েছে যে, তারা বিচারকের রায় মেনে চলবে না।’ তবে স্টারলিংক এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
এর আগে স্টারলিংক অ্যানটেলকে জানিয়েছিল, তারা এক্সকে তাদের পরিষেবা থেকে সরাবে না, যতক্ষণ না তাদের ব্রাজিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেনের সুবিধা চালু করা না হয়। গত সপ্তাহে আদালতের আদেশ মেনে এক্স আরোপিত জরিমানা না দেওয়ায় স্টারলিংকের অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন বন্ধ করে দেন বিচারপতি মোরায়েস।
আদালতের আদেশ অমান্য করার কারণে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে দেশব্যাপী এক্সের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে এক্সের সঙ্গে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের শুরু। সে সময় ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকসান্দ্রে দে মোরায়েস অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে বেশ কয়েক ডজন এক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রতিক্রিয়ায় ইলন মাস্ক বিচারক মোরায়েসকে ‘স্বৈরাচার’ ও ‘একনায়ক’ বলে আখ্যা দেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, এসব অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করা হবে।
মাস্কের হুমকির ব্রাজিলের আদালতে প্রতিষ্ঠানটির নতুন বৈধ প্রতিনিধি পাঠাতে পরে এক্সকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বিচারক মোরায়েস। অন্যথায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি পড়তে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। তাই শুক্রবার ব্রাজিলে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ এক্স বন্ধের নির্দেশ দেন মোরায়েস।
টেলিকম ও টেক কোম্পানিগুলোকে অ্যাপ স্টোর ও প্ল্যাটফরম থেকে এক্সকে সরানোর জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন মোরায়েস। অ্যাপল ও গুগলকে এক্স অ্যাপটি সরানোর জন্য পাঁচ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এ আদেশ বাস্তবায়নে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের (আইএসপি) ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
এক্স অ্যাপটি ব্লক করার পাশাপাশি ভিপিএন দিয়ে অ্যাপটি ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যদি ভিপিএনের সহায়তায় এক্স ব্যবহার করেন, তবে দৈনিক ৫০ হাজার ব্রাজিলিয়ান রিয়াল (প্রায় ৯ হাজার ডলার) জরিমানা হতে পারে।
বিভিন্ন শিল্পের পরিসংখ্যান প্রদানকারী অনলাইন প্ল্যাটফরম স্ট্যাটিস্টার মতে, এপ্রিল ২০২৪ অনুযায়ী এক্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম বাজার ব্রাজিল। দেশটিতে এক্সের প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছেন।
মোরায়েসের সমর্থকেরা তাঁকে গণতন্ত্র রক্ষার যোদ্ধা হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন। তবে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর কঠোর হওয়া নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে।
মাস্কের মতে, মোরায়েস ব্যবহারকারীদের মতামত সেন্সর করার চেষ্টা করেছেন। নতুন প্রতিনিধি নিয়োগের সময় না দিয়েই গত আগস্টে ব্রাজিলে এক্স অফিস বন্ধ করে দেন। ফলে আদালতে নির্ধারিত সময় প্রতিনিধি পাঠাতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post