ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর নতুন প্রধান হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এই তথ্য জানিয়েছে হামাস।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনষ্ঠানে গিয়ে ‘ইসরায়েলের গুপ্তহত্যা’য় নিহত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিসিক্ত হলেন সিনওয়ার।
এমন এক সময়ে সিনওয়ারের কাঁধে হামাসের দায়িত্ব এলো, যখন ইসরায়েলের হামলায় জ্বলেপুড়ে ছারখার ফিলিস্তিন ভূখণ্ড, বিশেষ করে গাজা উপত্যকা।
প্রতিদিন দলে দলে ফিলিস্তিনিরা জীবন দিচ্ছে, স্কুল-মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, আশ্রয়শিবির এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে না ইসরায়েল।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলায় হতাহতের ঘটনার পর ফিলিস্তিনের এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে গাজায় হামলা শুরুর পর ১০ মাসের বিভীষিকায় প্রাণ গেছে ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের।
৬১ বয়সি সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবরের হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মনে করে ইসরায়েল। সিনওয়ার গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে ময়দানে নেতৃত্বে রয়েছেন। তাকে হত্যার প্রতিশ্রুতি রয়েছে তেল আবিবের।
গত ৩১ জুলাই ইরানে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় নিহত হন হানিয়া। তবে হামলার দায় স্বীকার-অস্বীকার কোনোটাই করেনি ইসরায়েল। তখন বাস্তবতা পর্যালোচনায় সব পক্ষই মোটামুটি একমত ইসরায়েলের হামলাতেই হানিয়া নিহত হন।
এর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান ও হিজবুল্লাহ। ইরান যদি সত্যিই হামলা চালিয়ে বসে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ইরানকে নিবৃত করতে চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
তবে ইরান বলেছে, ইসরায়েলকে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করতেই হবে। মঙ্গলবারই ইসরায়েলে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী।
হামাসের রাজনৈতিক প্রধানের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের গুরু দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি তাকে আন্তর্জাতিক দূতিয়ালিও করতে হয়। আগে হানিয়া এ দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে বহুপক্ষীয় আলোচনায় হানিয়া যেভাবে প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এখন সেটি করতে হবে সিনওয়ারকে।
একই সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতির গতিবিধি অনুযায়ী প্রতিবেশী ও ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন ও তা বজায় রাখারও দায়িত্ব এখন থেকে সিনওয়ারকে পালন করতে হবে।
হামাস নেতাদের হত্যা করার যে হুংকার দিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, তাতে সিনওয়ারকে একইসঙ্গে নিজের নিরাপত্তা ও যুদ্ধের নেতৃত্ব দুইটিই সামলাতে হবে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, হামাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে গুপ্ত হামলা চালিয়ে সংগঠনটির নেতাদের হত্যা করার ইতিহাস রয়েছে ইসরায়েলের। এবারের গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হানিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল দেশটি এবং শেষপর্যন্ত তারা তাতে সফল হয়েছে।
২০০০-এর দশকে হামাসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গাজার মধ্যেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করে ইসরায়েল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক নেতা আহমেদ ইয়াসিন, সহপ্রতিষ্ঠাতা আবদেল আজিজ আল-রানতিসি, কমান্ডার সালেহ সেহাদেহ।
২০০৭ সালে হামাসের হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ বুঝে পাওয়ার সেই সময়ের নেতা আহমেদ আল-জাবারিকে ২০১২ সালে গাজার ভেতরেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করে ইসরায়েল।
বারবার নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করলেও প্রতিবারই পুনর্গঠিত হয়ে হামাস ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে এবারের নেতৃত্বশূন্যতার গভীরতা ছিল বেশ বড়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দায়িত্ব এখন সিনওয়ারের কাঁধে।
সম্প্রতি ইসরায়েল দাবি করে, গত মাসে গাজার খান ইউনিসে তাদের হামলায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন। হামাসের ডেপুটি সামরিক প্রধান মারওয়ান ইসা মার্চে নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে এক হামলায় নিহত হন বলে ইসরায়েল দাবি করে।
হামাসের নেতাদের হত্যা করতে দীর্ঘ এক ‘ওয়ান্টেড লিস্ট’ রয়েছে ইসরায়েলের। মোহাম্মদ দেইফের নাম এই তালিকায় দেখা যায় ১৯৯৫ সাল থেকে।
রয়টার্স বলছে, দেইফের মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় আঘাত পাওয়ার কথা গাজার বাংকার থেকে হামাসের প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া সিনওয়ারের, যিনি এখন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হলেন।
এখন হামাসের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, যুদ্ধবিরতি হবে কিনা, সেসব হামাসের নতুন রাজনৈতিক প্রধান সিনওয়ারের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post