কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ওই বিক্ষোভের দায়ে সোমবার ৫৭ বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। এর একদিন পরই বাংলাদেশীদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধ করে দেশটি।’
বাংলাদেশে সহিংসতার পক্ষে দুবাইয়ে সমাবেশ করার খেসারত দিচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা। বাংলাদেশিদের জন্য দেশটির ভিসা বন্ধের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও, দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন জানান, দেশটিতে একদল বাংলাদেশির বিক্ষোভের পর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা আবেদন বাতিল হচ্ছে। যাদের ভিসা আগেই ইস্যু হয়েছে, তারাও আমিরাতে প্রবেশে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে নাশকতাকারীরা। আগুন দেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায়। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য যানবাহন। এসবের সমর্থনে দুবাইয়ে বিক্ষোভ করেন কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি। সেখান থেকে গ্রেফতার ৫৭ জনের বিরুদ্ধে আমিরাতের আদালত গত সোমবার শাস্তির বিধান রেখে রায় দেন। এতে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং একজনকে ১১ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছে, দুবাইতে বিক্ষোভের ঘটনায় তিন ক্যাটাগরিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসা বন্ধ না হলেও, আবেদনকৃত ভিসা প্রত্যাখ্যান হওয়ার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। যাদের ভিসা আগে ইস্যু হয়েছে, তারাও আমিরাতে প্রবেশে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় মুখে পড়ছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন। এ জন্য কিছু ‘অতি উৎসাহী’ প্রবাসীকে দায়ী করেন তিনি। এদিকে, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারাও।
এদিকে, দুবাইয়ে আন্দোলন করে প্রবাসীরা আইন অমান্য করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’ এমন কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সাম্প্রতিক দুবাইয়ে ভিসা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে যেভাবে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, বিদেশেও তারাই বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংস করার জন্য একই কাজ করেছে। আমি মনে করি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-বিএনপির প্রতাত্মারা যেমন কর্মকাণ্ড করেছিল তাদের শাস্তি হয়েছিল। তেমনিভাবে দুবাইয়ে আন্দোলন করে তারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এজন্য তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীদের ব্যাপারে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। এটি তাদের রাষ্ট্রীয় বিষয়।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে লিখিত কোনো অর্ডার আসেনি। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারাও কিছু জানে না। বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনিও কিছু জানাননি। শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। জানলে আমরা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, সঠিক তথ্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার জন্য, দেশের উপকার হবে। মানুষের বিভ্রান্তিও কমবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post