জনশক্তি রফতানির নামে গত এক যুগে প্রায় ৩২৪ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে একটি মাফিয়া চক্র। তাদের কারণে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এছাড়া বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনই বৈধ জনশক্তি রফতানিকারকরাও সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পাঠানো একটি লিখিত অভিযোগে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ায় জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. এম. রফিক।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আমি ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারের জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে প্রায় লক্ষাধিক দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিককে বিদেশে পাঠিয়েছি।
দেশের রাজস্ব খাতে যা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এবং সরকার আমাকে দুইবার সিআইপি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো- গত এক যুগ ধরে কিছু মাফিয়া চক্র অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে।
তারা অবৈধভাবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা পাচার করছে। এর ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব খাত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা দেশের মুদ্রা বাজারকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে।
এস এম রফিক আরো বলেন, ২০১৬ সালে আমিই প্রথম এই অবৈধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করি। এরপর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্যরা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং আমাকে অপহরণের মাধ্যমে সেই রিট পিটিশন প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করে।
এরপর থেকে বৈধ জনশক্তি রফতানিকারকরা এই মাফিয়াদের মুঠোয় বন্দি হয়ে পড়েন। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো- জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সামান্য আর্থিক সুবিধা নিয়ে বেআইনিভাবে এই মাফিয়া চক্রকে সহযোগিতা করছেন।
এই অবৈধ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে পুঁজি করে গত এক যুগে অবৈধভাবে প্রায় ৩৪৪ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।
এর ফলে শোষিত হয়েছে বিদেশগামী শ্রমিকদের পরিবার ও আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেটের কারণে বর্তমানে দুই লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কর্মহীন হয়ে আছেন।
এই অবৈধ জনশক্তি রফতানি ও অর্থপাচার সিন্ডিকেটের মূল হোতা ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার মো. আমিন নূর।
তারা দুজনই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার নাগরিক। তাদের গডফাদাররা লন্ডনে ও কানাডায় প্রতিষ্ঠিত বিএনপির দোসর ও জোবাইদা রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার।
ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমি এই বিষয়গুলো বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে ব্যর্থ হই। এই অবৈধ সিন্ডিকেট তাদের অপরাধগুলোকে আইনে পরিণত করে নিয়েছে।
এসব মাফিয়া চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিগত সময়ে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পেতেন, যা দেশের রাজস্ব খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতো।
তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতকে সিন্ডিকেটমুক্ত করে বেকার শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে এবং পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
একই সঙ্গে জনশক্তি রফতানি খাতের এই মাফিয়া চক্র তাদের সহযোগিতাকারী সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post