মাঝে মাঝে অনেকেরই মন চায় বাস্তবতা থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে। ভাবুন তো একবার বাস্তবে যদি এমন সুযোগ থাকত যে কোনো পোশাক পরলে আপনি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারছেন। এমনটা কি আসলেই সম্ভব? অসম্ভব মনে হলেও বাস্তবে এটি সম্ভব করেছে চীন।
দেশটির একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী দাবি করেছে যে, নজরদারি ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দিতে সক্ষম কোটজাতীয় পোশাক আবিষ্কার করেছে তারা। ওই শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের আবিষ্কৃত ওই কোট পরলেই নজরদারি ক্যামেরায় ‘অদৃশ্য’ হওয়া যাবে। এমনকি রাতের বেলায় ইনফ্রারেড ক্যামেরায়ও ধরা পড়বে না।
তারা কোটটির নাম দিয়েছে, ‘ইনভিস ডিফেন্স’। পোশাকটির মধ্য দিয়ে মানুষের চোখে সব দেখা গেলেও তা এমন প্যাটার্ন দিয়ে তৈরি, যা দিনের বেলায় ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে। আর রয়েছে এমন কিছু তাপ উৎপাদক উপাদান যা রাতের বেলায় ইনফ্রারেড ক্যামেরার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গবেষক দলের দাবি, এই কোট পরলেই হ্যারি পটারের মতো অদৃশ্য হওয়া যাবে। এমনকি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সযুক্ত সিকিউরিটি ক্যামেরাতেও ধরা পড়বেন না ‘অদৃশ্য’ ব্যক্তি।
এই পোশাকের দামও খুব একটা বেশি হবে না বলে দাবি করেছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের পোশাক যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। শত্রুপক্ষের নজর থেকে বাঁচতে এই পোশাক কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে বলেও দাবি করেছেন তারা।
তবে সেক্ষেত্রে এই পোশাকের প্রযুক্তির আরো উন্নতি করতে হবে। উহান ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর ওয়াং ঝেং প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করছেন।
প্রফেসর ওয়াং বলেছেন, ‘আজকাল, অনেক নজরদারি ডিভাইস মানবদেহ শনাক্ত করতে পারে। রাস্তায় থাকা ক্যামেরাগুলোতে পথচারী সনাক্তকরণ ফাংশন রয়েছে এবং স্মার্ট গাড়ি পথচারী, রাস্তা এবং বাধাও শনাক্ত করতে পারে। আমাদের ইনভিসডিফেন্স কোট পরলে ক্যামেরা আপনাকে ধারন করতে পারবে, তবে আপনি মানুষ কিনা তা বলতে পারবে না।’
ইনভিসডিফেন্স এর পৃষ্ঠে একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন রয়েছে, যা মেশিন ভিশনের অ্যালগরিদমে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং এইভাবে ক্যামেরাটিকে অন্ধ করে দেয়।
ফলে ক্যামেরা এর পরিধানকারীকে মানুষ হিসাবে চিনতে পারে না। একটি নজরদারি ক্যামেরা মূলত মানবদেহকে নড়াচড়া এবং আকার থেকে সনাক্ত করে।
রাতের বেলায় ইনভিসডিফেন্স কোট একটি অস্বাভাবিক তাপমাত্রার প্যাটার্ন তৈরি করে যা ক্যামেরাকে বিভ্রান্ত করে। এই ক্যামেরা সাধারণত ইনফ্রারেড থার্মাল ইমেজিংয়ের মাধ্যমে মানবদেহকে ট্র্যাক করে।
ওই আবিষ্কারক দলে থাকা পিএইচডি ছাত্র ওয়েই হুই বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন অংশ হল ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্নের ভারসাম্য। গবেষকরা মেশিনের দৃষ্টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য উজ্জ্বল ছবি ব্যবহার করেছিলেন এবং এটি কাজ করেছিল।
তবে মানুষের চোখে তা আরো স্বচ্ছ হয়ে উঠে এবং কোট পরিধানকারীকে আরো স্পষ্ট করে দেখা যায়।’ ওয়েই হুই এর মূল অ্যালগরিদমটি তৈরি করেছিলেন।
ওয়েই বলেছেন, তাদের গবেষক দলটি সর্বনিম্ন সুস্পষ্ট প্যাটার্ন ডিজাইন করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছে, যা কম্পিউটারের দৃষ্টিকে অক্ষম করতে পারে। এর দাম পড়বে মাত্র ৫০০ ইউয়ানেরও (৭০ মার্কিন ডলার) কম। ওয়েই বলেন, ‘ইনভিসডিফেন্স যুদ্ধক্ষেত্রে অ্যান্টি-ড্রোন যুদ্ধ বা মানব-মেশিন সংঘর্ষেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
গত ২৭ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থীরা একটি সৃজনশীল কাজের প্রতিযোগিতায় তাদের উদ্ভাবনের জন্য প্রথম পুরস্কার জিতেছে। ইভেন্টটি চীনের স্নাতকোত্তর উদ্ভাবন এবং অনুশীলন প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস স্পন্সর করেছে।
তাদের প্রকল্পটি AAAI-23 সম্মেলনেও উপস্থাপন করা হবে, যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে। বার্ষিকভাবে আয়োজিত AAAI হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্মেলন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post