অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া আট প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ দেশে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।
লাশ নিতে বিমানবন্দরে ভিড় করেন নিহতের স্বজনরা। কিন্তু ময়নাতদন্তের জন্য সেগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে।
শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে মারা যাওয়া আট জনের মধ্যে পাঁচ জনই মাদারীপুরের রাজৈরের বাসিন্দা। বাকি তিন জন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের।
তারা হলেন- মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)।
স্বজনরা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা বিমানযোগে লিবিয়া পৌঁছান।
পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন তারা। মাঝপথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়।
পরে ভূমধ্যসাগরেই যুবে যায় নৌকাটি। এতে বাংলাদেশি এই আট যুবক মারা যান। এ ছাড়া এক পাকিস্তানি নাগরিকও মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।
স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামে রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা নেন।
পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে পাঠালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া মামুন শেখের বড় ভাই সজীব শেখ বলেন, আমার ভাইসহ আট জনের লাশ দেশে এসেছে। এখন ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়েছে।
একবার তিউনিসিয়ায় ময়নাতদন্ত হয়েছে, এরপরও আমাদের দেশে এটা করার প্রয়োজন ছিল না। বাড়িতে সবাই লাশের জন্য অপেক্ষা করছে, কখন যে যেতে পারবো, বুঝতে পারছি না।
মারা যাওয়া সজীবের বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ছেলে মারা গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে এখন মে মাস। লাশ দেশে এলো দেরি করে, তারপরও ভোগান্তি। কখন আমার ছেলের মুখটা দেখতো পাবো, সবাই লাশের অপেক্ষা করছে।
রাজৈর থানার ওসি আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনি সহযোগিতা চাইলে করা হবে।
এরইমধ্যে সরকারিভাবে লাশ দেশে পৌঁছেছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দালালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post