কোনও বাড়ির ড্রয়িং রুম দেখে সহজেই বোঝা যায় বাড়ির মানুষের রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব কেমন। তেমনি বিমানবন্দরকেও বলা হয় একটি দেশের ড্রয়িং রুম। বহির্বিশ্বের যে কেউ সেই বিমানবন্দরের পরিবেশ ও আতিথেয়তা দেখে ধারণা পেয়ে যান দেশটি সম্পর্কে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
বিশেষ করে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ লাইন আর বিশৃঙ্খলা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ পর্যটকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ভিসার জন্য এভাবে ভোগান্তি পেলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা তথা বাংলাদেশের প্রতিও আগ্রহ হারান পর্যটকরা।
পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশের বর্ষবরণ আয়োজন দেখতে এসেছিলেন তাইওয়ানের ১০ জন পর্যটক। বাংলাদেশে জার্নি প্লাসের মাধ্যমে ১৩ এপ্রিল তারা ঢাকায় আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য তাদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়।
প্রথমে তাদের ১০ জনের গ্রুপকে একসঙ্গে ভিসা আবেদন জমা দিতে বলা হলেও, পরবর্তী সময়ে বলা হয়, সবাইকে পৃথকভাবে আবেদন জমা দিতে। তারা পৃথকভাবে ভিসার আবেদন জমা দেন। রাত ১টার দিকে তারা ঢাকায় আবেদন করলেও বিমানবন্দর থেকে তারা বের হন রাত ৩টার দিকে। বিমানবন্দরে ভিসা-প্রাপ্তির ভোগান্তিতে বিরক্তি প্রকাশ করেন তারা।
বাংলাদেশে জার্নি প্লাসের মাধ্যমে গ্রিস থেকে মার্চে ঢাকায় এসেছিলেন ১৩ জন পর্যটক। তাদেরও একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেয়েছেন তারা।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণ হাতে পাওয়া মতো। অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ছুটেও লাভ নেই, প্রত্যাখ্যান করে বিদেশি পর্যটকদের ফেরত দেওয়া হয়। আবার অনেক দেশে দূর-দূরান্ত থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে ভিসার আবেদন করাও কষ্টসাধ্য। এ কারণে যেসব দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে ভিসা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পান, তারা বাংলাদেশে সরাসরি চলে এসে বিমানবন্দরে ভিসা আবেদন করেন। তবে বিমানবন্দরে এসেও সহজে মেলে না ভিসা।
জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অ্যারাইভাল হলে রয়েছে অন-অ্যারাইভাল ভিসা ডেস্ক। সেখানে পাঁচ-ছয়টি ডেস্ক থাকলেও দুই-তিন জনের বেশি ইমিগ্রেশন অফিসার থাকেন না। একজন বিদেশিকে ভিসা পেতে হলে প্রথমে ভিসা আবেদন জমা দিতে হয় লাইন ধরে।
সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলেও বসার কোনও ব্যবস্থা নেই, পানি পানেরও কোনও সুযোগ নেই। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েন পর্যটকরা। ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার পর ভিসা ফি জমা দিতে আবার সোনালী ব্যাংকের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়াতে হয় তাদের।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা নিয়ে পর্যটকরা অসন্তুষ্ট। বিভিন্ন সময়ে আমাদের গেস্টরা ইমিগ্রেশন নিয়ে তাদের খারাপ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। বিমানবন্দর ছোট হলেও, একটু আন্তরিক হলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশে এসেই তাদের অভিজ্ঞতা খারাপ হলে বাংলাদেশের প্রতিও আগ্রহ হারান পর্যটকরা।
তিনি আরও বলেন, অন-অ্যারাইভাল ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি। একই সঙ্গে সেখানে যেন বেশি সময় অপেক্ষা না করতে হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটকরা কোনও বিষয় না বুঝলে তাদের সহায়তা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। দুই-তিন ঘণ্টা যদি ভিসার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকরা কেন আসবেন?
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বারবার ইমিগ্রেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। ইমিগ্রেশন পুলিশকে পর্যটন বিষয়ে অরিয়েন্টেশনের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইমিগ্রেশনের যারা কাজ করেন, তারা স্থায়ী নন, বদল হয়ে যান।
পুলিশের এ বিষয়ে মোটিভেশন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলোর কোনও সমাধান হবে না। আমার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব করবো, যারা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা নেবেন, তাদের জন্য আলাদা জায়গা ও কাউন্টার যেন নিশ্চিত করা যায়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার মিটিং হচ্ছে।
আমার সেখানে বসার জন্য সোফার ব্যবস্থা করেছি। সমস্যা হচ্ছে, অনেকের সঙ্গে ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস থাকে না, তখন তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে অনেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা আবেদন করলেও সময় প্রয়োজন হয়। পুরো প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করবো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post