দেশে বাজারের হিসাব মেলাতে ভোক্তারা যখন ব্যয় সংকোচন নীতিতে স্বস্তির খোঁজে, তখন বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ টাকা কমানো হয়েছে।
অপরদিকে আগে থেকেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে আটা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, পেঁয়াজ, রসুন ও আমদানিকৃত আদার মূল্য বুদ্ধি পেয়েছে। তবে আদা, দারুচিনি, ব্রয়লার মুরগির দাম নিম্নমুখী। অন্যান্য পণ্যদ্রব্যের মূল অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর রায়ের বাজার, টাউন হল বাজার ও শিয়া মসজিদ বাজার ঘুড়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে সয়াবিন তেল (বোতল) এক লিটার ৪ টাকা বেড়ে ১৬৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ২ টাকা কমে ১৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা এবং লিটার প্রতি বোতলজাত পাম অয়েল ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তারা বলছেন, এমনিতেই দাম বেশি সব পণ্যের। তার ওপর আবার বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের দাম। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
টাউন হল ও রায়ের বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ডিলার পর্যায় থেকে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার আগেই সকাল থেকে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারেও বেড়ে যায় দাম। তবে আমদানিকারকদের দাবি, দাম যত বাড়ার কথা ছিল, তার চেয়ে কম বাড়ানো হয়েছে।
একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাদা আটা (খোলা) প্রতি কেজি এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে ৪৫-৫০ টাকা, ৩ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ (দেশি নতুন) কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, পেঁয়াজ (আমদানিকৃত) ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন (দেশি নতুন) কেজি প্রতি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে আদা (দেশি নতুন) ৩০০ টাকা এবং আদা (আমদানিকৃত) ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি কেজি প্রতি ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুড়ে চালের দাম বাড়তি অবস্থায়ই দেখা গেছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খুচরা দর অনুযায়ী, আজকের বাজারে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইজাম চাল (মাঝারি) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। আর সরু চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৬ টাকায়। তবে টাউন হল ও রায়ের বাজারে টিসিবির মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিল মাসের শেষেই বোরো ধান ওঠা শুরু হবে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। তখন মজুত ফের বাড়বে। চালের দামও কমবে।
বিক্রেতারাও একই কথা জানিয়ে বলেন, ধানের ভরা মৌসুম শুরু হবে জুন থেকে। ফলে তার আগে বাজারে চালের দাম কমার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।
রায়ের বাজারের চাল বিক্রেতা মো. খোকন বলেন, ঈদের আগেই দাম বেড়েছে চালের। এরপর আর বাড়েনি। তবে ভরা মৌসুমে চালের দাম কমতে পারে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ বি এম খোরশেদ আলম খান বলেন, চালের ঘাটতি বা সংকটের কারণে বাজারে চালের দাম বাড়েনি। বেড়েছে, কতিপয় বড় বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে।
মুরগির বাজারে এখনো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি ২১০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা ২৫০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমেছে।
এছাড়া সোনালি মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে লাল ও সাদা লেয়ার আগের মতোই যথাক্রমে ৩৩০ ও ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বস্তি দিচ্ছে সবজি। বর্তমানে প্রতি কেজি উস্তা ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, সজনে ডাঁটা ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, কাঁচা আম ১৪০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাপ্পী নামে এক বিক্রেতা বলেন, কাঁচামালের দাম কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। এটা আগে থেকে বলা যায় না। কিছু সবজির দাম কমেছে। কিছু অপরিবর্তিত আছে।
এদিকে, অপরিবর্তিত আছে ডিম ও আলুর দাম। আগের মতোই ফার্মের লাল ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকায় ও আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post