ইসরাইলে ইরান যে হামলা চালিয়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। গত কয়েক দশক ধরে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটিতে হামলা চালানো একমাত্র দেশও ইরান। এই হামলাকে অনেকেই ইসরাইলের নিষ্ঠুরতার শাস্তি হিসেবে দেখছেন; আবার কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, ‘অজেয়’ ভাবমূর্তির ইসরাইলে সরাসরি হামলা চালিয়ে এতদিনের গেরো খুলে দিয়েছেন ইরানিরা।
এই হামলা ভবিষ্যতে জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উৎসাহ যোগাবে। কিন্তু ইরানের হামলার ধরন এবং দেশটির নেতাদের বক্তব্যের পর অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন, এই হামলা কি সাজানো নাটক?
ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর গত প্রায় আট দশকে ইরানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক নানান চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে গেছে; কখনো বন্ধুত্ব, আবার কখনো চরম শত্রুতা। তবে গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা আলাদা মাত্রা পেয়েছে। যার সবশেষ রূপ দেখা গেল গত শনিবার রাতে।
এই হামলায় কয়েকশ কামিকাজি ড্রোন এবং মিসাইল ব্যবহার করেছে তারা। বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে ইরানের ভূখণ্ড এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সক্রিয় প্রক্সি গ্রুপগুলো মিলে প্রায় সাড়ে তিনশ ড্রোন এবং মিসাইল ছোড়া হয়েছে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডারসহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলো ইরান। দুই সপ্তাহ পর তারা সেই প্রতিশোধ নিলো।
কিন্তু যেভাবে হামলা চালানো হলো এবং হামলার আগে-পরে ইরানের কূটনৈতিক কলাকৌশল থেকে প্রতীয়মান হয়, এই হামলা যতটা না শত্রুপক্ষকে শায়েস্তা করার জন্য, তার চেয়ে বেশি মুখ রক্ষার জন্য!
হামলার পরপরই বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ব্রিফিং করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি তাদের বুঝান, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যে হামলাটি তারা করেছে সেটি তাদের ন্যায্য অধিকার।
তুরস্ক, জর্ডান এবং ইরাকের কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স বলেছে, ইসরাইলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক দিন আগেই দেশগুলোকে বিস্তৃত নোটিশ দিয়েছিল ইরান। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলার আগে তারা ওয়াশিংটন ও তেহরান উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছিল।
তুরস্ক একদিকে ইরানের প্রতিবেশী অন্যদিকে ন্যাটোর সদস্য। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদানে তুরস্ককেই বেছে নিয়েছিল ইরান। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ধারণা করছেন, তুরস্কের মাধ্যমেই আমেরিকার মনোভাব সম্পর্কে ধারনা নিয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিগন্যাল পেয়েই তারা হামলা চালিয়েছে।
সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, ইরানের হামলা অতর্কিত ছিল না। তারা তথ্য দিয়েই হামলা চালিয়েছে এবং বড় ধরনের কোনো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যও তাদের ছিলো না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যই দেশটির অফিসিয়াল অবস্থান। এর বাইরে ইরানের সামরিক এবং বেসামরিক নেতারা যেসব উত্তেজক বক্তব্য দিচ্ছেন সেগুলো মূলত ইরানের জনগণ এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানপন্থী প্রক্সিদের উদ্দেশে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post