রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২২ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতিতে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ওমানের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর যায়গা করে নিয়েছে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স, এএফপি, এপি, এএনআই, সংবাদমাধ্যম বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডের খবর। এমনকি দুর্ঘটনার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘তাৎক্ষণিক খবর’ হিসেবে এটি প্রচার করা হয়।
অনেকটা একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে টাইমস অব ওমান, বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), এএনআই, সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস-সহ আরও অনেক গণমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে গ্রিন কজি কটেজ নামে একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর খুব অল্প সময়েই পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির নিচের দিকে আগুন লাগে এবং পড়ে তা ওপরে ছড়িয়ে পড়ে। নিচতলায় আগুন লাগার কারণে ভবনটির ওপরের তলাগুলোতে আটকে পড়েন অনেকে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য ওপর থেকে মানুষ লাফিয়ে পড়ে। সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেও অনেকে ব্যর্থ হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ কেউ জানিয়েছেন, দুই বা তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেকে হাত পা ভেঙ্গে আহত হয়েছেন। তবে তারা বেঁচে গেছেন। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকার কারণে পুরো সিঁড়িটি ‘অগ্নি চুল্লির’ মতো হয়ে গিয়েছিল। যার কারণে কেউ সিঁড়ি ব্যবহার করে নামতে পারেনি।
সিঁড়ি দিয়ে এক সাথে তিন জনের বেশি যাতায়াত করা যেতো না বলেও জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে নয়, বরং তারা আসলে ধোয়ার কারণে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর আগে তারা অচেতন হয়ে পড়েছিল। ভবনটির আগুন নেভানোর তেমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি।
আগুনে ৪৪ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনা কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় বলে জানানো হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। স্থানীয় মিডিয়ার মতে, রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে একটি রেস্তোরাঁয় আগুনের সূত্রপাত হয়।
৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও কয়েক ডজন মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দমকল কর্মকর্তাদের মতে, দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩৩ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের প্রধান বার্ন হাসপাতালে আরও অন্তত ১০ জন মারা যান। ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে আগুন লাগা বেশ সাধারণ ঘটনা। এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রায়ই দুর্বল নিরাপত্তা সচেতনতা এবং আইনের অপর্যাপ্ত প্রয়োগকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি ছয় তলা বিল্ডিংয়ে রাতে বিশাল অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার বেইলি রোডের একটি জনপ্রিয় বিরিয়ানি রেস্তোরাঁয় আগুনের সূত্রপাত হয় এবং দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্বজনরা শুক্রবার ভোরে তাদের প্রিয়জনের মরদেহ গ্রহণের জন্য হাসপাতালে জড়ো হতে থাকেন এবং অনেককে জরুরি বিভাগের বাইরে শোক করতে দেখা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার বিল্ডিংটিতে অনেক লোক শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে খাবার খাচ্ছিল। এই ভবনে বেশিরভাগই রেস্তোরাঁ এবং বেশ কয়েকটি পোশাক ও মোবাইল ফোনের দোকান রয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই শ্বাসরোধে মারা গেছেন এবং কেউ কেউ ভবন থেকে লাফ দেওয়ার কারণে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশ সাধারণ। আগুনের ঘটনা এখন নতুন ভবনেও বৃদ্ধি পেয়েছে, মূলত এসব ভবন প্রায়ই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই নির্মিত। ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার, এয়ার কন্ডিশনার এবং দুর্বল বৈদ্যুতিক তারের কারণে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকে।
আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ৩৫ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে এসব মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টার পর থেকে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য নিহতদের স্বজনদের তথ্য চায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। তথ্য সংগ্রহ সাপেক্ষে মরদেহ শনাক্তের পর মরদেহ হস্তান্তর শুরু হয়। মরদেহ হস্তান্তর করাদের মধ্যে যাদের পরিচয় মিলেছে। তালিকা :
১। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শিপন পোদ্দারের মেয়ে সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২)
২। ঢাকার বংশালের মো. মোসলেমের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম (৩২)
৩। ঢাকার প্রাণ নাথ রায়ের মেয়ে পপি রায় (৩৩)
৪। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৃত মো. জহিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৫)
৫। কুমিল্লার এম এ এইচ গোলাম মহিউদ্দিনের মেয়ে জান্নাতিন তাজরিন
৬। ঢাকার পুরানা পল্টনের মো. আলীর মেয়ে নাজিয়া আক্তার (৩১)
৭। ঢাকার পুরানা পল্টনের সায়েক আহমেদের ছেলে আরহান মোস্তাক আহমেদ (৪৬)
৮। ঢাকার মতিঝিলের কবির খানের ছোট মেয়ে মাইশা কবির মাহি (২১)
৯। কবির খানের বড় মেয়ে মেহেরা কবির দোলা (২৯)
১০। ঢাকার মতিঝিলের জয়ন্ত কুমার পোদ্দারের স্ত্রী পম্পা সাহা (৪৭)
১১। মাদারীপুরের জাকির শিকদারের ছেলে মো. জিহাদ হোসেন (২২)
১২। মৌলভীবাজারের ফজলুর রহমানে ছেলে সাংবাদিক আতাউর রহমান শামীম (৬৩)
১৩। যশোরের মো. কবির হোসেনের ছেলে মো. কামরুল হাবিব রকি (২০)
১৪। টাঙ্গাইলের মোয়াজ্জেম মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (২৭)
১৫। কুমিল্লার লালমাইয়ের কোরবান আলীর মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২)
১৬। কুমিল্লা সদরের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান মিশু (১৯)
১৭। ঢাকার হাতিরঝিলের সৈয়দ মোবারকের মেয়ে ফাতিমাতুজ জোহরা (১৬)
১৮। মোবারক হোসেনের ছেলের সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮)
১৯। একই পরিবারের মুন্সি বাহারউদ্দিনের মেয়ে স্বপ্না আক্তার
২০। মুন্সিগঞ্জের মো আওলাদ হোসেনের মেয়ে জারিম তাসনিম প্রিয়তি (২০)
২১। নারায়ণগঞ্জর মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে শান্ত হোসেন (২৩)
২২। ভোলার মইনুল হকের ছেলে দিদারুল হক (২৩)
২৩। ঢাকা হাতিরঝিলের সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক (৪৮)
২৪। হবিগঞ্জর উত্তর কুমার রায়ের স্ত্রী রুবি রায় (৪৮)
২৫। একই পরিবারের প্রিয়াংকা রায় (১৮)
২৬। ঝালকাঠির দিপেশের পুতে তুষার হাওয়ালদার (২৬)
২৭। ঢাকা শান্তিনগরের ইসমাইল গাজীর ছেলে জুয়েল গাজী (৩০)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post