গত বছর দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে রেকর্ড এক কোটি ৭৪ লাখ (১৭.৪ মিলিয়ন) যাত্রী যাতায়াত করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৩.৪ শতাংশ বেশি। এদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক যাত্রী। রেকর্ড যাত্রী যাতায়াতের সুবাদে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা আয় করেছে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) তথ্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
২০২১-২২ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের শাহজালাল বিমানবন্দরের আয় ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা ও ৯৪২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশি ও বিদেশি মিলিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা গত বছর প্রায় ২.৬৭ মিলিয়ন বেড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ এবং কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এসব তথ্য বলছে, বিমানভ্রমণ করে বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়া ও দেশে আসা দুটোই বেড়েছে। শ্রম রপ্তানি, শিক্ষাগত অভিবাসন, দেশের বাইরে চিকিৎসাগ্রহণ, অবসর পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণ বৃদ্ধিই এর মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন তারা।
এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিমান খাতের জন্য সরকারের সহায়তামূলক পদক্ষেপের কারণেও দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বেড়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও বেড়েছে বিমানযাত্রীর সংখ্যা। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মোট বিমানযাত্রী বেড়েছে ৩৬.৯ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের পুরো বছরের বৈশ্বিক বিমানযাত্রী প্রাক্-মহামারি (২০১৯) পর্যায়ের চেয়ে ৯৪.১ শতাংশ বেড়েছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও স্কোয়াড্রন লিডার লুৎফর রহমান বলেন, ২০২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন পূর্বাভাস দিয়েছিল যে বাংলাদেশ বিমানযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের মধ্যে কোভিড-পূর্ব পর্যায়ে ফিরে যাবে। তবে বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত এই প্রক্ষেপণ পেরিয়ে গেছে।
‘এর কারণ হচ্ছে, আমাদের প্রধান যাত্রীরা উপার্জনকারী। অন্যান্য পর্যটক ও ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীদের আগেই তারা বিদেশে ভ্রমণ শুরু করেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে,’ বলেন তিনি।
এছাড়া গত বছর ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে বলে জানান লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই অনুযায়ী আমাদের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করেছি। বিমান ও অন্যান্য এয়ারলাইন্সও তাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে দিয়েছে।’
ক্যাবের তথ্য অনুসারে, সংস্থাটি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। বাকি সাতটি বিমানবন্দর একত্রে মাত্র ৩১৪ কোটি টাকা আয় করেছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের বর্তমান ধারণক্ষমতা বার্ষিক ৮ মিলিয়ন যাত্রী। তবে ফ্লাইট ব্যবস্থাপনার অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে গত বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ক্যাব বলছে, তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন যাত্রী ধারণ করতে পারবে।
বর্তমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৫টি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালের দুই নবাগত ইজিপ্টএয়ার ও ফ্লাইনাসও রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও এয়ার চায়না, এয়ার প্রিমিয়া, ফিটস এয়ার, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স এবং রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্সসহ বেশ কয়েকটি নতুন এয়ারলাইন্স অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা আরম্ভ করবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post