শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে দেশে। ঘন কুয়াশায় বিমানবন্দরগুলোতে দৃশ্যমানতা কমে গেছে। ফলে বেশ কয়েক ডজন ফ্লাইট নির্ধারিত বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। ফলে ফ্লাইটগুলোকে বাধ্য হয়ে নামতে হয়েছে অন্য বিমানবন্দরে।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা থেকে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩টি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে পারেনি। এর মধ্যে সাতটি ফ্লাইট ভারতের কলকাতা ও হায়দরাবাদ অবতরণ করেছে। বাকি ছয়টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ঘন কুয়াশার পাশাপাশি খারাপ আবহাওয়া, যান্ত্রিক সমস্যা, ধর্মঘট, সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনায় ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়। এমনকি যাত্রী বা ক্রুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার জন্যও ফ্লাইট নির্ধারিত বিমানবন্দরে পরিবর্তে কাছাকাছি অন্য বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য হন পাইলটরা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
এক্ষেত্রে যাত্রীরা দুই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন। প্রথমত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একই ফ্লাইট আবার তার নির্ধারিত গন্তব্যে যাত্রা করবে, দ্বিতীয়ত এয়ারলাইনস যাত্রীদের তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য আরেকটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করবে।
তাছাড়া কোনো যাত্রীর যদি কানেক্টিং ফ্লাইট থাকে, সেক্ষেত্রে যাত্রী তার কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করতে পারে। কাজেই সহসাই প্রশ্ন জাগে এ ধরনের কোনো কারণে যদি ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়, তাহলে যাত্রীদের কী করা উচিত? এমন হলে একজন যাত্রী তার ফ্লাইটের আগে, পরে কিংবা ফ্লাইট চলাকালীন বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যাতে সেই যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনায় ফ্লাইট ডাইভারশনের প্রভাব কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
হাতে সময় রেখে ফ্লাইট বুক করা
যদি সম্ভব হয়, তাহলে যাত্রীরা চাইলে আগেভাগে তাদের ভ্রমণ শুরুর পরিকল্পনা করতে পারেন। যাতে ফ্লাইট ডাইভার্ট হলেও নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীর হাতে যথেষ্ট সময় থাকে। যেমন- যদি কোনো যাত্রী গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বা পারিবারিক কোনো দাওয়াতে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে ফ্লাইট অন্তত একদিন আগে বুক করার পরিকল্পনা করতে পারেন তিনি। এতে ফ্লাইট যদি ড্রাইভার্টও হয়, তাহলে যাত্রী তার গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট মিস করা থেকে বেঁচে যাবেন।
সরাসরি ফ্লাইট বেছে নেয়া
কানেক্টিং ফ্লাইট বুক না করে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার ফ্লাইট বেছে নিতে পারেন যাত্রী। যদিও এতে ফ্লাইট ডাইভারশনের প্রভাব থেকে মুক্তি পাবেন না তিনি। তবে এক্ষেত্রে তাকে অন্তত কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার চিন্তা করতে হবে না।
এয়ারলাইনসের কন্ট্রাক্ট অব ক্যারেজ ভালোভাবে পড়ুন
কোনো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করার আগে যাত্রীকে অবশ্যই ভালোভাবে সেই এয়ারলাইনসের কন্ট্রাক্ট অব ক্যারেজ পড়তে হবে। তাদের খুঁজে দেখতে হবে সেই এয়ারলাইনস ফ্লাইট ডাইভারশনের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নিয়ে থাকে কিংবা যাত্রীদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা ক্ষতিপূরণ দেয়।
অর্থাৎ যাত্রী যদি ফ্লাইট ডাইভারশনের ক্ষেত্রে নিজের অধিকার নিয়ে অবগত থাকেন তাহলে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য রাখা
ফ্লাইট ডাইভার্ট হলে এয়ারলাইনসের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যেন সহজেই যোগাযোগ করা যায়, সেজন্য অবশ্যই যাত্রীকে এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করার টেলিফোন নম্বর বা এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলের তথ্যদি রাখতে হবে। পাশাপাশি যাত্রীকে তার মুঠোফোনে সম্পূর্ণ চার্জ থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে যাত্রী নিজের সঙ্গে একটি পাওয়ার ব্যাংকও রাখতে পারেন। তাছাড়া নিজের সঙ্গে এমন একটি মুঠোফান রাখতে হবে যেটি দিয়ে যেকোনো দেশে যে কাউকে কল করা যাবে।
প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিজের সঙ্গে বহন করা
যেসব জিনিস যাত্রীর প্রতিদিন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, সেসব জিনিস যাত্রীর ক্যারি অন ব্যাগে বহন করতে হবে। যেমন- ওষুধ, কন্টাক্ট লেন্স সলিউশ ইত্যাদি।
ডিপার্চার গেটের কাছাকাছি থাকা
সাধারণত এয়ারলাইন কর্মীরা ডিপার্চার গেটের কাছে ফ্লাইটের বিভিন্ন বিষয় ঘোষণা দেন। কাজেই ফ্লাইট ডাইভার্ট হলে যাত্রীর ডিপার্চার গেটের কাছাকাছি থাকা উচিত, যাতে কোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অপডেট মিস না হয়।
তথ্য এবং সাহায্যের জন্য এয়ারলাইনকে যোগাযোগ করা
ফ্লাইট ডাইভার্টের ক্ষেত্রে যাত্রীকে তার এয়ারলাইনসের নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কাছে আপডেট চাইতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ফ্লাইট পুনরায় উড্ডয়ন করতে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে সে বিষয়েও তথ্য নিতে হবে।
ফ্লাইট ডাইভারশনের কারণে যদি কোনো যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়, তাহলে যাত্রী চাইলে তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে তার এয়ারলাইনসকে অনুরোধ করতে পারবেন। মুঠোফোনে এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হলে যাত্রী চাইলে তার এয়ারলাইনসের সামাজিক মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারবে।
নিজেকে শান্ত রাখা
এমন ঘটনার সম্মুখীন হলে যাত্রীকে অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কেননা ফ্লাইট ডাইভারশনের কারণে ফ্লাইটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই চাপে থাকবে। তাই মাথা ঠান্ডা করে বিনয়ের সঙ্গে সাহায্য চাইতে হবে এবং নিজের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এয়ারলাইন থেকে দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post