মৃত্যু হলো দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি। এরপর শুরু হয় আখেরাতের জীবন। আখেরাতের জীবনের প্রথম যাত্রাপথ হলো কবরের জীবন। এ জীবনকে বলা হয় বরযখ। কবরের জীবন কঠিন হবে কিনা তা নির্ভর করে মানুষের কর্মের উপর।
যারা কবিরা গুনাহ করে, তাদের কবরের জীবন কঠিন হবে। কবরের আজাব সত্য। কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই দুনিয়াতে নেক কাজ করতে হবে। কবরের জীবন কঠিন হয় যদি মানুষ কবিরা গুনাহ করে। কবরের আজাব সত্য। কবরের জীবনে সুখী থাকতে হলে অবশ্যই দুনিয়াতে নেক কাজ করতে হবে। কেউ যদি স্বপ্ন দেখে সে কবরস্থানে আছে বা কবর দেখে তাহলে কী হয়? এ বিষয়ে কথা বলবো আজ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মদিনা বা মক্কার কোন এক বাগানের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এমন দুব্যাক্তির আওয়াজ পেলেন, যাদের কবরে আজাব হচ্ছিল।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এদের দুজনকে আজাব দেয়া হচ্ছে, অথচ কোন বড় গুনাহের জন্য এদের আজাব দেয়া হচ্ছে না। তারপর তিনি বললেন হ্যাঁ, এদের একজন তার প্রস্রাবের নাপাকি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। আর একজন চোগলখুরী করত।
তারপর তিনি একটি খেজুরের ডাল আনালেন। তা ভেঙ্গে দুখণ্ড করে প্রত্যেকের কবরের উপর একখণ্ড রাখলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রসুলাল্লাহ! এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, হয়ত তাদের আজাব কিছুটা লাঘব করা হবে, যতদিন পর্যন্ত এ দুটি না শুকায়।
হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাতে রসুল আমার নিকটে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন ও জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন। দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তার পিছনে চললাম। তিনি জান্নাতুল বাকি পৌঁছলেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন। (মুসলিম ৯৭৪)
এ হাদিস দু’টির মাধ্যমে বুঝা যায়, কবরের আজাব অবশ্যই সংগঠিত হবে। স্বপ্নে কবর দেখা ভয় বা উদ্বেগের বিষয় নয়। স্বপ্ন দুই ধরনের হয়। একটা সত্য স্বপ্ন যেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো হয়। আরেকটি হলো শয়তানের স্বপ্ন। শয়তান মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য দেখায়।
বিখ্যাত স্বপ্ন বিশারদ আল্লাম ইবনে সিরিন তার গ্রন্থ ‘তাফসিরুর রুইয়া লি ইবনে সিরিনে’ লেখেন, কেউ যদি স্বপ্ন কবর দেখে তার অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে। নিম্নে তার কয়েকটি আলোকপাত করা হলো।
যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে, তাকে মৃত্যু ছাড়াই কবরে দাফন করা হয়েছে, তার এ স্বপ্ন তাকে ইঙ্গিত দিতে পারে যে, তাকে যে ব্যক্তি দাফন করেছে সে আসলে তার যে কোনো ক্ষতি করতে পারে। তার থেকে সাবধান থাকতে হবে। এ ধরনের স্বপ্ন সাধারণত শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। এ ধরনের স্বপ্ন দেখলে সঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বামদিকে থুথু নিক্ষেপ করে আউজু্বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজিম পড়বে।
যে নিজেকে কবরে দাফন অবস্থায় দেখবে, তার ব্যাখ্যা হতে পারে, সে কোনো কারণে কারো কাছে অপধ্বস্ত হতে পারে। কলুষিত হতে পারে। তাই অন্যের সঙ্গে লেনদেনে কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যদি সে দেখে যে তাকে দাফন করার পর কবর থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাহলে তার অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি অজানা স্থানে স্বপ্নে কবর দেখে, এর ব্যাখ্যা হতে পারে, সে একজন মুনাফিক লোকের সাথে মেলামেশা করবে। তার সঙ্গে যে কোনো ধরণে কাজ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
যদি সে স্বপ্ন দেখে যে সে নিজের জন্য কবর খনন করছে, সে নিজের জন্য একটি ঘর তৈরি করতে পারে। যদি সে কোন মৃত ব্যক্তির কবর দেখতে পায়, তবে সে তাকে তার স্থান বা শহরে পরিণত করবে। তার উত্তরাধিকারীরা সেখানে একটি ঘর তৈরি করতে পারে। যদি সে দেখে যে সে সেখানে জানাজা না করেই কবরে প্রবেশ করেছে, তবে সম্ভবত সে একটি ঘর কিনে নেবে। ধনি হতে পারে।
যে নিজেকে দেখে সে যেন কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে এটা সম্ভব যে সে দোষী বা গুনাহগার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদি সে নিজেকে কবরের চারপাশে হাঁটতে দেখে, তবে সম্ভবত সে নিঃস্ব হয়ে যাবে। লোকদের কাছে সে হাত পাতবে, কিন্তু তাকে কেউ কোনো কিছু দান করবে না। এ ধরনের স্বপ্ন সাধারণত শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। এমন হলে সাথে সাথে তওবা করতে হবে।
মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়। আর কবর মৃত্যু পথের প্রথম যাত্রা। তাই শয়তান মানুষকে ভয়ের জিনিস দিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। শয়তান তাই কবর দিয়ে মানুষকে বেশি ভয় দেখায়। অনেক সময় মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবর দেখিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যেনো মানুষ পাপাচার থেকে বিরত থাকে। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post