শিশুরা মানব বাগানের ফুল। ফুলে-ফলে বাগ-বাগিচা যেমন সুসজ্জিত আর সুরভিত হয়ে ওঠে, তেমনি মানব শিশু মানব সমাজ ও মানব বাগানকে সুসজ্জিত আর সুরভিত করে তোলে। বলা হয়, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আগামীর মহাসম্পদ। অতএব এই মানব শিশুকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচর্যা করা হলে, তারাই হবে পৃথিবীর বুকে বেড়ে ওঠা সত্য-সুন্দরের আদর্শবান মহান মানুষ।
তাছাড়া প্রতিটি শিশু আপন মা-বাবার জন্য তার ঘরের শোভা ও সৌরভ। আর পরকালীন জীবনের সওয়াব অর্জনের অনন্য পাথেয় ও মাধ্যম। পিতা-মাতার জীবনে রক্তের সম্পর্কীয় যত আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের শীর্ষ অবস্থান করে তাদের গর্ব ও গৌরবের ধন, কলিজার টুকরো সন্তান-সন্ততি।
যাপিত জীবনে সন্তান-সন্ততি পিতা-মাতার সবচেয়ে কাছের ও প্রিয়। পার্থিব জীবনে পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অনেকগুলো হক ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে রয়েছে। যেগুলো যথাযথ ও সুন্দরভাবে পালন করা প্রতিটি পিতা-মাতার অবশ্য পালনীয় ও অনিবার্য করণীয়। এসবের একটি হলো, শিশু সন্তানের কান্নায় গুরুত্ব দেওয়া।
কান্না শিশুর ভাষা। খিদে পেলে শিশু কান্নাকাটি শুরু করে। আবার খারাপ লাগার অনুভূতিও কান্নায় প্রকাশ করে। শিশুর অতিরিক্ত কান্নায় অনেক সময় মা-বাবা চিন্তিত হন। তাকে স্বাভাবিক করতে নানা চেষ্টা-কসরত করেন।
শিশু যেহেতু কথা বলতে পারে না, তাই কান্নাই তার অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। কান্নার মাধ্যমে তারা ক্ষুধা, কষ্ট, ঘুম, অস্বস্তি, ভয় কিংবা অন্যকোনো প্রয়োজনকে প্রকাশ করে। এ কারণে শিশুর কান্নায় কাজকর্ম ও ব্যস্ততা ফেলে দ্রুত তার কাছে আসা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর মাত্রাতিরিক্ত কান্নায় পিতা-মাতা বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে সন্তানের ওপর বদদোয়া করে বসে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও পরিহারযোগ্য। কারণ সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া যেমন কবুল হয়, তেমনি তাদের বদদোয়াও কবুল হয়।
হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির দোয়া সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়- মজলুমের (অত্যাচারিত) দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।’ -(সুনানে আবু দাউদ : ১৫৩৮)
তাই প্রাত্যহিক জীবনে সন্তান কান্না করলে, সন্তানের কান্নায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা। বিষয়টির সুস্পষ্ট বিবরণ একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু কাতাদা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে নামাজ সংক্ষেপ করি। কারণ শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করি না।’ -(সহিহ বোখারি : ৭০৭)
বর্ণিত হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে শিশুর কান্নার কারণে নামাজ সংক্ষিপ্ত করে শিশুর মাকে শিশুর কান্না দূর করার ব্যবস্থা করে দিতেন। এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করে, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত করে। কারণ তাদের মাঝে দুর্বল-অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ লোক থাকে আর যখন একাকী নামাজ আদায় করে, তখন ইচ্ছামতো দীর্ঘ করতে পারে।’ -(সহিহ বোখারি : ৭০৩)
অন্য আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে যত সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করেছি, সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ কখনো অন্যকোনো ইমামের পেছনে আদায় করি নাই।’ -(সহিহ মুসলিম : ৯৪১)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
“হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের তার পার্থিব বহু দুঃখ-কষ্টের মধ্যে একটি দূর করে দেবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি হতে তার কেয়ামতের বহু দুঃখ-কষ্টের মধ্যে একটিকে দূরীভূত করবেন।” -(সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪৮)
ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাব নুরুল ইজাহে (১২৫ পৃষ্ঠা) যে সব কারণে নামাজ ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব শিরোনামে উল্লেখ আছে, যেকোনো ধরনের বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সাহায্য প্রার্থনা করে, তাহলে তার সাহায্যে নামাজ ছাড়া। যেহেতু শিশুর ভাষাই কান্না, তাই তার কান্নাকে গুরুত্ব দেওয়া।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post