ডলার হল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত মুদ্রা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডলার অপরিহার্য। তাই অর্থনীতির বাজারে ডলারকে দেবতাতূল্য মর্যাদা দেওয়া হয়। ডলারের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি একটি দেশের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ডলারের মূল্য হ্রাস পেলে আমদানি ব্যয় কমে যায়, যা রফতানিকারকদের জন্য লাভজনক হয়। এছাড়াও, ডলারের মূল্য হ্রাস পেলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন।
ব্যাংকগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্তে বছরখানেকের মধ্যে প্রথম কমানো হচ্ছে ডলারের মূল্য। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম কমবে ৫০ পয়সা। পাশাপাশি কমছে আমদানিকারকের কাছেও ডলার মূল্য। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) মাত্র পাঁচ মিনিটের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
উক্ত সভায় উপস্থিত বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম এবং এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন, আমদানি কমেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ডলারের দাম ৫০ পয়সা করে কমানো হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করে আসা এ দুই সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। আগে যার দাম ছিলো ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা; যেখানে পূর্ববর্তী দাম ছিলো ১১১ টাকা। মাত্র ৫০ পয়সা মনে হলেও অর্থনীতির বাজারে এ ৫০ পয়সার মূল্য অনেক বেশি। আর বাংলাদেশের কথা উঠলে তো এক্ষেত্রে আর কোনো প্রশ্নই উঠে না!
কোভিড-১৯ এর সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগ কাটিয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশ সবরকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্রসীমা দূর করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিলেও বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়তে থাকলে সব দিক থেকেই অসুবিধা সৃষ্টি হয়। কেননা টাকার অবমূল্যায়নে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকেই আছে রপ্তানি আয়ের চেয়ে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ আমদানি আয়ের উপর। জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বেশ বড় রকমের হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।
মোটাদাগে বলা চলে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা। তবে বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা অনেকটা সহজ হবে। এক তথ্যমতে জানা যায়, পূর্বের নির্ধারিত ডলার মূল্যে আগামী ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশ সরকারের ঘাড়ে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বোঝা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এখন সরকারের এ বোঝাটা অনেক বেশি সহজেই লাঘব করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বলা চলে ডলারের মূল্য হ্রাস বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ।
অর্থনীতির বাজারে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বছরের প্রথম সিকি ভাগে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ডলার মূল্য কমায় এ টাকার পরিমাণও কমে যাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংক আমানতের ঝোঁক কমে গিয়েছিলো। ডলার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এদিকটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে বলবে আশা করা যাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়,তা হলো আমদানি। রফতানি বাবদ যে পরিমাণ বাংলাদেশ পাবে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ দিতে হয় আমদানি খাতে।
এতে করে অনেক পণ্য আমদানিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো বিভিন্ন খাত। ডলার মূল্য হ্রাস হওয়াও এসব খাতগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রেমিট্যান্সের আন্তঃপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবার আমদানি খাতে গুরুত্ব দিলে জাতীয় অর্থনীতি পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠবে। নতুন এক সক্রিয়তা পাবে দেশের অর্থনীতি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসী আয়। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার কারণে প্রবাসী আয় কমে আসছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় বাড়াতে বাফেদা ও এবিবি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সরকারের ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে ডলার প্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন উপকারভোগীরা। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে বেশি টাকা পাঠাতে আগ্রহী হবেন। ফলে প্রবাসী আয় বাড়বে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post