সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে এরদোগান নিজের সিদ্ধান্ত বদলেছেন। তিনি বেশ কয়েকবার ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নাকচ করেন। অবশেষে সেই আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গতকাল সোমবার বলেছেন, সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে এখন আর আপত্তি নেই তাঁর।
এরদোয়ানের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়ে গতকাল ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক দিন। এখন সুইডেনকে ন্যাটোভুক্ত করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।
লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আজ মঙ্গলবার বসছে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন। এর আগে গতকাল সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন এরদোয়ান ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন। এ বৈঠকের পরই এরদোয়ানের অবস্থান বদলের কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটোপ্রধান স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমি এটা ঘোষণা করতে পেরে খুবই আনন্দিত যে সুইডেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। শিগগিরই দেশটির গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাবটি পাসে গুরুত্বের সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেন, আজ সুইডেনের জন্য খুবই আনন্দের একটি দিন।
নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার পর ন্যাটো জোটের সদস্য হতে গত বছর আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছিল সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটি কয়েক দশকের নিরপেক্ষতার নীতি ত্যাগ করে। মূলত রাশিয়ার আগ্রাসনের ভয়ে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য হতে চায়।
গত এপ্রিলে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সবুজসংকেত পায় ফিনল্যান্ড। কিন্তু তুরস্ক ও হাঙ্গেরির আপত্তির কারণে সুইডেনের বিষয়টি ঝুলে যায়। তুরস্কের অভিযোগ, ‘কুর্দি সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সুইডেনের। এমনকি সুইডেনে এখনো কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন।
এ ছাড়া সুইডেনে একের পর এক পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় স্টকহোমের সঙ্গে আঙ্কারার মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব কারণে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা আটকে দেয় তুরস্ক। কেননা, ন্যাটোর নিয়ম অনুযায়ী, নতুন সদস্য যুক্ত করতে হলে আগের সব সদস্যদেশের সম্মতির প্রয়োজন হয়।
ন্যাটো সম্মেলনের প্রাক্কালে এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় বাইডেন আশা প্রকাশ করেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিনি সুইডেনকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেখতে চান। তবে বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে।
এমনকি সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে স্থবির হয়ে পড়া আলোচনা যদি আবার শুরু হয়, তাহলে তিনি ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দিতে পারেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগের নাম ছিল ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি। ১৯৮৭ সালে এ সংগঠনের সদস্য হতে আবেদন করেছিল তুরস্ক। পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে এখনকার ইইউর সদস্য হতে উদ্যোগ নেয় দেশটি। ২০০৫ সালে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। তবে তুরস্কে ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, এমন অভিযোগে ২০১৬ সালে এ আলোচনা বন্ধ করে দেয় ইইউ।
এ বিষয়ে এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ন্যাটোর প্রায় সব সদস্যদেশই ইইউর সদস্য। কিন্তু ইইউর সদস্য করতে তুরস্ককে প্রায় ৫০ বছর ধরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post