ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা – এই দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকসকে দেখা হয় শিল্পোন্নত দেশের জোট ‘জি-সেভেন’-এর বিকল্প হিসেবে। এবার ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সৌদি আরবের। এ জোটের বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যুক্ত হতে আলোচনা শুরু করেছে দেশটি। আর এ আলোচনা সফল হলে পশ্চিমা বলয় থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে বের করে আনা ব্রিকসের জন্য আরও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ পশ্চিমা নেতাদের কপালে।
সংবাদমাধ্যম এশিয়া টাইমসের মতামত বিভাগে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দিয়ানেস কামাত বলেন, ব্রিকসের এনডিবিতে সৌদি আরবের যুক্ত হওয়ার অর্থ হলো, বিশ্বে পশ্চিমা বলয়ে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন যে প্রভাব বিস্তার করেছিল তা কমে যাওয়া। আর এমনটি হলে জি সেভেনের আরও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে ব্রিকস। এতদিন ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণে চলত বিশ্বের বড় বড় সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এবার সেই নিয়ন্ত্রণ আলগা হতে পারে।
বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থার দিকে তাকালে প্রথমেই নজরে আসবে দুটি নাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। আর এ দুটি প্রতিষ্ঠান পশ্চিমা অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তবে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর রাশিয়া ও চীনে বিনিয়োগ কমে গেছে। এনডিবি এ সমস্যার সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
এমন অবস্থায় সৌদি আরবের ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন বার্তা পাচ্ছে পশ্চিমা নেতারা। বার্তাটি হলো, বর্তমানে ব্রিকসে যারা যুক্ত হচ্ছে এবং পরে আরও যারা যুক্ত হবে, তাদের সবার লক্ষ্য একটাই, বিশ্ব অর্থনীতিতে পশ্চিমা কাঠামোর বিকল্প তৈরি করা।
অবশ্য এর আভাস আগেই পেয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। এ কারণে পরিস্থিতি সামলাতে চলতি বছরই জি সেভেনের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয় ভারত, ব্রাজিল, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে। ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতো সৌদি আরবও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় সীমানা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার পক্ষে ছিল ব্রিকসের এসব দেশ। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতা তাদের হতাশ করে। এ জন্যই ব্রিকস পশ্চিমা ঘেঁষা নয়।
আরও একটি ব্যাপার এখানে উল্লেখ করার মতো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পশ্চিমারা তাদের মিত্র দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেও নাক গলায়, যা ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পছন্দ নয়। এ কারণেই এই জোট গঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আর সৌদি আরবও চাইছে ঠিক সেটাই। জো বাইডেন গত বছর দেশটিতে সফর করার পরও তাই তাঁর পক্ষে থাকছে না দেশটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিকস জোটের এমন আচরণে লাভবান হবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চীনেরও লাভ বৈ লোকসান নেই। বলা হচ্ছে, সৌদি আরবের ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার পেছনেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে চীন। আর রিয়াদ একে দেখছে মূলত অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। দেশটি এমন একটি অবস্থানে থাকতে চায় যাতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যা করছে, তাদের সঙ্গে যেন তা না ঘটে।
আরও পড়ুন- ওমানের মধ্যস্থতায় শান্তি ফিরছে ইরান ও মিশরে
তবে বিভিন্ন দেশ ক্রমান্বয়ে ব্রিকসে যুক্ত হতে থাকলে কিছু সমস্যায় পড়তে পারে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বেশি সমস্যায় আসলে পড়বে এনডিবি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াতে এ ব্যাংকের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ। কিন্তু রুশপন্থী দেশগুলো ব্রিকসের সদস্য হলে রাশিয়ায় এনডিবি ব্যাংকের কার্যক্রম চালুর জন্য চাপ আসতে পারে। তখন আবার শাঁখের করাতে আটকে যাবে ব্রিকস। এ ছাড়া জোটের দুই সদস্য চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, যা ব্রিকসে প্রভাব ফেলতে যথেষ্ট। আবার এ জোটের সদস্য দেশগুলো একটির ভৌগোলিক অবস্থান অপরটি থেকে অনেক দূরে। এসব দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোও ভিন্ন ভিন্ন। তবে তারপরও ব্রিকসে সৌদি আরবের সংযুক্তি শেষমেষ পশ্চিমাদের বিপক্ষেই যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রভাব। পশ্চিমা দেশগুলো এর বিপরীতে কী পদক্ষেপ নেয়, তাই এখন দেখার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post