চলমান রাশিয়াযুদ্ধে ড্রোন শিল্পে ইরানের দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলা যায়। গেল বছরের শেষ দিকে ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে ইরানের তৈরি জেরানিয়াম-২ বা জেরান-২ আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় রাশিয়া। ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিই বলে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে ইরানের আত্মঘাতী ড্রোন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমরাস্ত্র শিল্পে ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে ইরান। বিশেষ করে, ড্রোন শিল্পে দেশটি বিপ্লব ঘটিয়েছে বলে খোদ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। তবে ইরান কিংবা রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে প্রমাণ থাকার দাবি করা হয়েছে।
ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন আকাশযান এখন যুদ্ধের অন্যতম সেরা হাতিয়ার। বলা চলে, ড্রোন ছাড়া আধুনিক যুদ্ধ অচল। ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমাদের বৈরিতার কারণে বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ইরান।
তবে হতাশ হয়ে দমে যায়নি তেহরান। ইউরোপ- আমেরিকার একের পর এক অবরোধ সত্ত্বেও অস্ত্র শিল্পে ব্যাপক উন্নতি করেছে দেশটি। বিশেষ করে, ড্রোন শিল্পে ব্যাপক উন্নতি করেছে ইরান। মনে করা হয়, ইরান ড্রোন শক্তিতে যে কোনো দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।
ইরানি ড্রোন শাহেদ ১৩৬-এর প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো— এটি বিস্ফোরক নিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে নিজেই বিস্ফোরিত হয়। এতে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষকে দ্রুত চাপে ফেলতে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেলক্ষেত্র ও গ্যাসক্ষেত্রের মতো স্থাপনাগুলোতে নিখুঁত হামলা চালানো যায়। অথচ আশপাশের কোনো কিছুর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয় না। যেমনটি ইউক্রেনে করছে রাশিয়া।
ইরানি ড্রোনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো— এগুলো দামে সস্তা। ফলে যুদ্ধের ব্যয়ভার কমাতে ব্যাপক সহায়ক এসব ড্রোন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো ড্রোন দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। এ কারণেই ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ এবং ইরাক ও সিরিয়ার ইরানসমর্থিত যোদ্ধাদের পক্ষে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।
শুধু এসব যোদ্ধাই নয়, বরং সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেশই প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে ইরানি ড্রোন কিনছে। আফগানিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিস্তান ও কাজখস্তানের মতো দেশগুলোও ইরানি ড্রোনের অন্যতম ক্রেতা। যদিও এসব দেশ তুরস্ক ও অন্যান্য দেশের ড্রোনও মজুত করছে।
ইরানি ড্রোন তথা সমরাস্ত্র শিল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অস্ত্র শিল্পে দেশটির অগ্রগতি থামাতে তেহরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমারা।
কিন্তু তার পরও ইরানকে থামাতে পারছে না। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ ইরানি ড্রোনের বৈশ্বিক স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ এই ড্রোন ব্যবহার করায় ইরানের শক্তিমত্তার বিষয়টি মেনে নিচ্ছে বিশ্ব।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post