মুসলমানদের মাঝে পবিত্র হজ পালনের ইচ্ছে নেই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বেশ ব্যয়বহুল হওয়ার এই হজ পালন অনেকের ইচ্ছে থাকা সত্যেও পূরণ হয়না।
প্রতি বছর রমজানের পর থেকে শুরু হয় হজের পুরোপুরি কার্যক্রম। আর এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। আল্লাহ্র ঘর তাওয়াফকারী মেহমানদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন কোটিকোটি টাকা।
বর্তমান সময়ে বিনামূল্যে হজে পাঠানোর নামে মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ছে ফিশিং লিংক। সেখানে বলা হচ্ছে, সৌদি সরকারের পক্ষথেকে ২০০ জনকে বিনামূল্যে হজে নেওয়া হবে।
আর এই সুযোগটি পেতে হলে লিংকে ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তাদের দেওয়া লিংকে ক্লিক করলে বেশকিছু তথ্য চাওয়া হচ্ছে এবং এই লিংক পরিচিত ২০ জনের মধ্যে শেয়ার করলে হজে যাওয়ার সুযোগ মিলবে এমনটি বলা হচ্ছে।
যদিও এসবের কোনোই ভিত্তি নেই। এসব মূলত সাইবার অপরাধীদের কাজ। তারা বিভিন্ন উৎসবের পূর্বে মানুষের মোবাইলে লটারি কিংবা উপহারের কথা বলে ফিশিং লিংক ছড়িয়ে দেয়।
আর এইসব লিংকে ক্লিক করলে মোবাইল ও পিসির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অপরাধীদের হাতে। এতে মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহ ব্যাংকের তথ্যও চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
মূলত বর্তমানে চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ। এটি যেমন অনেক কিছুকে সহজ করেছে তেমনি নেতিবাচক প্রভাবও তৈরি করছে সমাজে।
আগে চুরি করতে অনেক পরিশ্রম এবং ঝুঁকি নিতে হত, কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে চুরিও ডিজিটাল হয়েগেছে। মুহূর্তেই কোটি টাকা চুরি করা এখন কোনো ব্যাপারই না সাইবার অপরাধীদের জন্য।
এখন অনলাইনে প্রতারণার ধরন বদলাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে যে কারা প্রতারক এবং কারা প্রতারক নন।
অনলাইনে যেসব প্রতারণা হচ্ছে তারমধ্যে রয়েছে, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, গিফট পাঠানোর নামে প্রতারণা, লটারি জেতা, বিনিয়োগের নামে প্রতারণাসহ একাধিক উপায়ে এইসব চক্র প্রতারণা করছে।
ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে দামি গিফট পাঠানোর নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারণা পুরোনো। তারপরও মানুষ ওই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ছেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে লাখ লাখ ডলারের মালিক হয়ে সেই টাকা বাংলাদেশে পাঠানোর প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে প্রতিদিনই। কেউ পা দিলেই ধরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, এখন ছোট থেকে বড় সব ধরনের প্রতারণাই হচ্ছে অনলাইনে। গৃহশিক্ষক দেওয়া থেকে শুরু করে পাত্র-পাত্রী সবখানেই অনলাইন প্রতারণা। আর প্রতারকরা সময়ের সঙ্গে কৌশলও বদলাচ্ছে।
ডিভোসর্ড প্রবাসী পাত্রী পরিচয়ে প্রতারক চক্রের শিকার হচ্ছেন অনেকে। কেউ আবার অনলাইনে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ফেঁসে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, “ঢাকায় উচ্চবিত্তরাও এর শিকার হচ্ছেন। এমন কয়েকজন অভিযোগ করেছেন যারা টাকা তো খুইয়েছেনই এখন মানসম্মান রক্ষার চিন্তায় আছেন। তারা লিখিত অভিযোগও করতে চান না। শুধু প্রতারক চক্রকে থামাকে পারলেই যেন তারা বেঁচে যান।”
ফেসবুকে বিদেশি নারীর ছবি ব্যবহার করেও চলছে প্রতারণা। তাদের কেউ ইউএস আর্মি বা নেভির সদস্য বলেও পরিচয় দেন। সেই ধরনের ছবিও থাকে। ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করে। তারপর নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়। কেউ আবার আছেন বিদেশি কথিত বিনিয়োগকারী।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দপ্তরের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম টিম ইমো প্রতারণার একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে। তারা মেয়ে সেজে নারী কণ্ঠে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সুন্দর চেহারার ছবি দিয়ে কথিত নারীর আইডি থেকে মেসেজ দেওয়া হতো প্রবাসীদের। এরপর শুরু কথোপকথন ও ছবি আদান-প্রদান। সুন্দর ছবি ও মধুর কণ্ঠের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার সহজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন প্রবাসীরা।
পরে ভিডিও কলের প্রলোভনে কৌশলে প্রবাসীদের ইমো আইডি নেওয়া হতো নিয়ন্ত্রণে। পরে ইমো নম্বর পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি হিস্টোরিতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নম্বর সংগ্রহ করে নানা বাহানায় হাতিয়ে নিতেন টাকা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দপ্তরের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, “এখন সব কিছুই প্রকাশ্য।
তাই সীমাহীন প্রতারণা চলছে। বিকাশ ও ইমো হ্যাকিং এখন অনলাইন প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়া, কাজের অর্ডার করিয়ে দেওয়া, চাকরি দেওয়াসহ নানা প্রতারণা চলছে।
অধিকাংশ অনলাইন প্রতারণাই হয় বেশি লাভ বা বেশি কিছু পাওয়ার লোভ দেখিয়ে। সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সিভিলিয়ান ফোর্সের এডমিন এহসানুল হক ফয়সল বলেন, “অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত লোভ সামলাতে হবে এবং সচেতনতার বিকল্প নাই।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post