ভারতীয়দের টয়লেটে না যাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারতে অনেক রাজ্যই নিজেদের ‘ওপেন ডিফেকেশেন ফ্রি’ বা ওডিএফ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বহু জায়গাতেই শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয়রা এখনও উন্মুক্ত জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কেন শৌচাগার বানানোর পরও মানুষ সেখানে যেতে চাইছেন না?
ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাজ্য মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দিয়েছিলো যে সেই রাজ্যে কাউকে আর খোলা আকাশের নিচে মল-মূত্র ত্যাগ করতে দেয়া হবে না। কারণ গোটা রাজ্যে সবার হাতের নাগালে বানানো হয়েছে শৌচাগার।
ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ শুরু হয়েছিল, তার আওতায় দেশ জুড়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক কোটি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতীয়দের উন্মুক্ত জায়গায় শৌচ করার অভ্যাস পাল্টানো যায়নি।
কেন তারা শৌচাগারে যাচ্ছেন না, এ প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে অনেকেই বলেছেন, দেওয়ালে ঘেরা বদ্ধ জায়গায় শৌচ করতে তাদের ভাল লাগে না। গরম লাগে, গ্যাসে-দুর্গন্ধে নাকি বমি-বমি পায়। গ্রামীণ মহিলাদের অনেকের আবার বলেছেন পানির অভাবের কথা।
উত্তরপ্রদেশের এক নারী জানিয়েছিলেন, চাষের ক্ষেতে গেলে এক লোটা পানিতেই কাজ সারা যায়। কিন্তু শৌচাগারে গেলে লাগে পুরো এক বালতি পানি। এলাকায় পানির সমস্যা এতোই বেশি যে শৌচের জন্য এত পানি খরচ করা যায় না। কাজেই ভোরবেলায় কেউ ওঠার আগে আমি নিজের মায়ের সঙ্গে গিয়ে ক্ষেতেই কাজ সেরে আসি।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামে গ্রামে ভোররাতে এখন স্বেচ্ছাসেবীরা টহল দিচ্ছেন যাতে খোলা জায়গায় কেউ মল ত্যাগ করতে না পারেন। শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও যারা ক্ষেতে যাচ্ছেন তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কিছুটা লজ্জায় ফেলারও।
বিহারে একজন স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন, আমরা যখন তাদের বলি তোমার বউ-মেয়ে লোটা নিয়ে সকালে ক্ষেতে যাচ্ছ, তখন তার শরীরের এমন সব অংশ গোটা গ্রাম দেখতে পায়, যা স্বামী ছাড়া কারুর দেখার কথা নয়। তখন তোমাদের লজ্জা-শরম কোথায় যায়?”
শৌচাগার আন্দোলনে সঙ্গে যুক্ত ভারতের বৃহত্তম এনজিও সুলভ ইন্টারন্যাশনাল অবশ্য মনে করে, ভারতের আবহমান সংস্কৃতি যেহেতু বলে শৌচের কাজ বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত – তাই বাড়ির ভেতরে বা লাগোয়া শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হতে আরও সময় লাগবে।
আরও পড়ুনঃ আরও পড়ুনঃ ওমান থেকে দেশে ফেরার নিবন্ধন শুরু করেছে দূতাবাস
গ্রামীণ স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করেছেন সুস্নাত চৌধুরী। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছিলেন, একটা টয়লেট বানানোর পর তার প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সময়ই থাকে না আর সেটাই মানুষকে টয়লেট থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post