ওমানে লকডাউন খুলে দেওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। দেশটিতে গতকালের তুলনায় আজ আক্রান্ত বেড়েছে ২২৪ জন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১৩৬৬ জন আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২জনের মৃত্যু সহ মোট মৃত্যু ১৪৪ জন এবং মোট আক্রান্ত ৩৪,৯০২ জন।
আজ সুপ্রিম কমিটির একাদশ সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড.আহমেদ বিন মোহাম্মাদ আল সাঈদি বলেন, “ওমানের নাগরিক এবং প্রবাসীরা যদি সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অবহেলা করেন, তাহলে ওমানে করোনা পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে যেতে পারে, যখন আমরা তাদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যর্থ হবো।” তিনি এই ভাইরাস থেকে বাচার জন্য সবাইকে সুপ্রিম কমিটির আইন যথাযথ ভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে ওমানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর দায়ভার সমাজের উপর। কারণ জনগণ যথাযথ ভাবে সুপ্রিম কমিটির স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই আক্রান্ত বাড়ছে।” মন্ত্রী সবাইকে করোনা থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এখন পর্যন্ত মোট ১৭৯৬ জন ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, “কোম্পানিগুলি তাদের কর্মচারীদের সুরক্ষার যত্ন নিতে হবে প্রথমে এবং তারপরে দর্শনার্থীদের। সংস্থাগুলির কোনও কর্মচারী যদি ভাইরাসের কোনো লক্ষণ থাকে, তাহলে তাকে কাজ করতে আসতে বাধা দেওয়া উচিত। সেইসাথে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন লোকেরা কাজ করতে আসতে পারে কি না, তা নির্ধারণের জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।”
এসময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ধোফার গভর্নরেট বন্ধের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনাধীন রয়েছে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, কয়েকটি পর্যটন অঞ্চল বন্ধ বা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কমিটি তার সভায় গ্রহণ করবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওমানে করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর ৭% মাত্র হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসময় মন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, “কিছু কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার অর্থ এই নয় যে জনসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। জনসমাগম প্রতিরোধে অবশ্যই সুপ্রিম কমিটির আইন কঠোরভাবে পালন করা উচিত।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য বিষয় নিয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলোচনা করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ফান্ডে মোট ৩১ মিলিয়ন ওমানি রিয়াল অনুদান এসেছে। সেইসাথে ওমানে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের অফার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই মহা বিপদ থেকে বাঁচতে কেবল স্বাস্থ্য এবং সরকারী খাতের উপর নির্ভর করে না, এটি প্রতিটি ব্যক্তি এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সময় তিনি করোনা মোকাবেলায় ওমানের বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। মসজিদ খোলার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, আগে সবার জীবন রক্ষা করতে হবে, মসজিদ খোলার ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিভাইসের ফলাফল ৯৮% নির্ভুল রিপোর্ট প্রদান করে বলে জানান মন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, র্যাপিড টেস্টিং ডিভাইসগুলি ব্যবহার করার জন্য চাপ রয়েছে তবে এটি পর্যালোচনা করা দরকার, যেহেতু আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত পিসিআর পরীক্ষাগুলি ব্যবহার করি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ওমানে এখনও আইসিইউ বেডের সমস্যা দেখা দেয়নি। আমরা শয্যাগুলি রোগীদের সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেছি এবং আমাদের অন্যান্য সংস্থায় প্রসারিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।” মন্ত্রী বলেন, ওমানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে, আমরা ফিল্ড হাসপাতালগুলি খুলে দিতে পারি, কিন্তু আমরা তা করবোনা। কারণ আমরা চাই, ওমানে আক্রান্ত না বাড়ুক।
সংবাদ সম্মেলনে ওমানের রোগ নিয়ন্ত্রণ মহাপরিচালক ড. সাইফ আল আব্রি বলেন, ওমানে মাতরার থেকে সিবে আক্রান্ত বেশি হওয়ার পিছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। কারণ মাতরাহ এবং সিবের মধ্যে বেশকিছু ফারাগ রয়েছে বলে জানান তিনি। আব্রি বলেন, ওমানে মহামারীর শুরু থেকেই পরীক্ষা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ওমানে মোট ১লক্ষ ৭২ হাজার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সালালাহ অঞ্চলে ৪৩৮ জন আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০২ জন ওমানি নাগরিক এবং বাকি ৩৩৬ জন প্রবাসী। সালালার আল-ওস্তায় মোট ৮০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখা হয়েছে বলে জানান আব্রি।
আরও পড়ুনঃ ওমান প্রবাসীদের জন্য চালু হচ্ছে ফ্রি চিকিৎসা সেবা
এসময় দেশটির পরিবহনমন্ত্রী ডঃ আহমেদ আল ফুতাইসি বলেন, ওমানে পুনরায় ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্তটি যথাযথভাবে ঘোষণা করা হবে, উল্লেখ করেন তিনি। পরিবহন মন্ত্রী বলেন, এমন কিছু দেশ রয়েছে যা এখনও তাদের বিমানবন্দর চালু করেনি। মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ওমান এয়ার ও ওমান বিমানবন্দরগুলি ব্যয় হ্রাস করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং বার্ষিক সাধারণ অপারেটিং ব্যয়ের কমপক্ষে ৪০% হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।সুত্রঃ ওমান ডেইলি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post