ঢাকায় পুলিশ খুনের মামলায় ফেরারি আসামি বহুল আলোচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এখন কোথায়, তা নিয়ে সাধারণের কৌতূহলের শেষ নেই। তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে ঢাকার কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্য এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তারা আরাভের অবস্থান, জুয়েলার্সসহ সম্পদ এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দুবাই পুলিশের নজরদারিতে আরাভ, আটকের খোঁজ নিচ্ছেন ঢাকার গোয়েন্দারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আলোচিত ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে দুবাই পুলিশ আটক করেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের পক্ষ থেকে আটকের বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল ‘রেড নোটিশ’ জারি করে। এরপর গতকাল সোমবার রাতেই দুবাই পুলিশ তাকে আটক করে বলে গুঞ্জন ওঠে। তবে ঢাকা পুলিশের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে বলেছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের পর দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান দুবাই পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তবে আটকের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ।
এর আগে সোমবার (২০ মার্চ) পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেই আবেদন গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবরা বিকেল পর্যন্ত ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জনের নাম ছিল। সেখানে আরাভ খান বা রবিউল ইসলামের নাম ছিল না।মাত্র তিন বছরের মধ্যে খুনের মামলার একজন ফেরারি আসামির হাতে এত টাকা কীভাবে এলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোপালগঞ্জের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান এক সময়ের সোহাগ মোল্লাকে বড়লোক আরাভ খান বানিয়ে কেউ আড়ালে বসে কলকাঠি নাড়ছেন কিনা, তাও সন্দেহের আওতায় রেখেছে পুলিশ। এই আরাভ খানের আড়ালে কোনো অর্থপাচারকারী খেলছে কিনা তারও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
অপর একটি সূত্র বলছে, আরাভ ইস্যু পর্যালোচনা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারাও। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত গিয়ে সেখানে পাসপোর্ট করে দুবাই পাড়ি জমানোর খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরাভের প্রকাশ করা ভিডিও ঘেঁটে দেখছেন। এছাড়া আরাভের ভারত কানেকশনও খতিয়ে দেখছেন তারা।
এদিকে এখন পর্যন্ত আরাভকে আটক বা তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ডেস্ক।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মনজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আরাভকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দেওয়া আরাভ খানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই দাম্ভিকতা এখন আর নেই। কয়েকদিন ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান খুলে আলোচনায় আসা এই যুবক। সূত্র বলছে, আরাভ খান গোপনে দুবাই ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অন্য কোনো নির্ভরশীল দেশে পাড়ি জমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে দুবাই পুলিশের নজরদারি থাকায় তার জন্য সেটি খুব সহজ হচ্ছে না। জানা গেছে, আরাভ ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গমন করেছিলেন। ওই পাসপোর্ট বাতিল করতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বাংলাদেশের। শিগগিরই যাতে তার পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া ভারত সরকার শুরু করে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল পালিয়ে ভারতে গিয়ে নাম পাল্টে সে দেশের পাসপোর্ট কীভাবে পেলেন, সেটি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
এই আলোচনায় বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরাভের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে তার ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে আরাভ যেসব কথা বলেছেন, তা পর্যালোচনা করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এছাড়া আরাভ ভারতের যে ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং যে কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন, সে বিষয়েও তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় আরাভ খানের নাম প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই দুবাইয়ে আরাভ নজরদারিতে রয়েছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আরাভ খানকে গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই ও ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।’ দুবাইয়ের সূত্রগুলো বলছে, ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির খবরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন আরাভ খান। দুবাইয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। আরাভের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তিনি এখন বাসাতেই অবস্থান করছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। এই হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই পাসপোর্ট দিয়েই তিনি দুবাইয়ে পাড়ি জমান। আয়ের কোনো দৃশ্যমান উৎস না থাকা সত্ত্বেও বড় পরিসরে শুরু করেন স্বর্ণ ব্যবসা।
১৫ মার্চ দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকা অংশ নিয়েছিলেন। পরে জানা যায় আরাভ পলিশ খুনের মামলার আসামি। পুলিশ পরিদর্শক খুনের পর রবিউল ওরফে আরাভ তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণের জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউল এই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post