মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার কুয়েত। দেশটিতে কাজের ধরন অনুযায়ী ভিসার ধরনেও রয়েছে ভিন্নতা ও আলাদা নিয়ম-কানুন। অথচ এসব বিষয়ে না জেনে দেশটিতে যেয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রবাসীরা। সাধারণত দেশটিতে ২০ নম্বর খাদেম অর্থাৎ গৃহকর্মী এবং ১৮ নম্বর অর্থাৎ শোন কোম্পানি এই দুই ধরনের ভিসায় শ্রমিকরা কুয়েত যেয়ে থাকেন। এরমধ্যে খাদেম ভিসার মধ্যে রয়েছে ড্রাইভার, বাবুর্চি ও গৃহকর্মের সহযোগী এই তিন ধরনের ভিসা। এসব শ্রমিক মালিকের অনুমতি নিয়ে অন্য বাসায় কিছু সময় কাজ করতে পারে। এছাড়া অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অন্য কোথাও ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ পান না খাদেম আকামাধারীরা।
শোন ভিসা কয়েক ধরনের রয়েছে, এগুলোর মধ্যে মাজরা শোন ভিসা অর্থাৎ কৃষি কাজের ভিসা, রায় গানাম শোন ভিসা অর্থাৎ খামারের পশু-পাখি দেখাশোনার ভিসা, মাসনা শোন ভিসা অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার কাজের ভিসা। এছাড়াও মাসুরা সাগীরা অর্থাৎ ছোট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আখুদ হুকুমা ভিসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দেওয়া হয়। কোম্পানি লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে দেশটির বিভিন্ন অফিস, আদালত, শপিং মহল, রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। সাধারণত আট ঘণ্টা ডিউটিতে ৭৫ দিনার বেতন, খাওয়া নিজের, থাকা মালিকের এমনটিই নিয়ম।
সাধারণত বাংলাদেশ থেকে এই কয়েক ধরনের ভিসায় শ্রমিকরা যেয়ে থাকেন। এসব ভিসার শ্রমিকদের অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে ১৮ নম্বর শোন ভিসার মধ্যে আহালি নামে এক ধরনের ভিসা রয়েছে, যেখানে শ্রমিকরা নিজের পছন্দ মতো কাজ ও কোম্পানিতে আকামা পরিবর্তন করতে পারেন। ভিসাগুলো কয়েক হাত ঘুরে আসার ফলে বাংলাদেশিদের ভিসার মূল্য দিতে হয় ৬ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। যদিও একই ভিসায় ভারত ও নেপালের শ্রমিকদের খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।
শোন ভিসা নিয়ে দেশটিতে সাত বছর আগে আসা চট্টগ্রামের শাহজাহান বলেন, আমি মোবাইল মেরামতের কাজ জানি। দোকান বিক্রি করে দালালের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ভিসা কিনি। দালাল বলেছিল আহালি ভিসা যেকোনো জায়গায় আকামা পরিবর্তন করতে পারব। আসার পরে দেখে ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ। এই কাজ ছাড়া অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ নেই। কোম্পানির ডিউটি শেষে একটি মোবাইল দোকানে পার্ট টাইম কাজ করি। আমার মতো অনেকেই করছে, যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। চেকে ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কুয়েত প্রবাসী সমাজকর্মী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এক ল’ ফার্মে কাজ করা সুবাদে দেখেছি গত কয়েক বছরে দেশ থেকে অনেক শিক্ষিত বিভিন্ন কাজে দক্ষ তরুণরা শুধু ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকার কারণে তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন না। যার ফলে অনেককেই দেখা যায় কোম্পানিতে ডবল ডিউটি করতে হচ্ছে, কিন্তু সেই পরিমাণ বেতন পাচ্ছে না। কেউ আবার দক্ষতা অনুযায়ী অন্য জায়গায় পার্ট টাইম কাজ করেন, যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। নানামুখী ছাপে প্রবাসীরা হতাশায় ভুগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রবাসে যারা মারা যান তার বেশিভাগেরই স্ট্রোকে মৃত্যু।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দিল ওমান
প্রবাসীদের জরিমানা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করলো
ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ
সিআইপি নির্বাচিত হচ্ছেন ৬৭ প্রবাসী, সংখ্যায় দ্বিতীয়
ক্ষোভ আর অভিমানে হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post