কভিডসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক। বিশাল এ অভিবাসী শ্রমিকের সিংহভাগেরই গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত ও সিঙ্গাপুরে। শ্রমিকের সংখ্যার সঙ্গে প্রধান এসব শ্রমবাজার থেকে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ার কথাও। কিন্তু একেবারেই চিত্র বিপরীত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) রেমিট্যান্স প্রবাহ ২১ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জুলাই-সেপ্টেম্বর দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে অভিবাসী হয়েছেন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ বাংলাদেশী শ্রমিক।
সৌদি আরব ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। একই সময়ে কুয়েত থেকে কমেছে ১০ দশমিক ৪৩, ওমান থেকে ৪১ দশমিক ৫৬ ও কাতার থেকে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স। এশিয়ার অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার সিঙ্গাপুর থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩৮ শতাংশের বেশি। সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। অথচ আগের মাস আগস্টেও দেশটি থেকে ৩০ কোটি ডলার এসেছিল। আমিরাতের মতোই খারাপ পরিস্থিতি ওমান থেকে আসা রেমিট্যান্সের। সেপ্টেম্বরে কেবল ৪ কোটি ডলার এসেছে, যেখানে জুলাইয়েও এসেছিল প্রায় ৮ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও চলতি বছর ওমানে নতুন অভিবাসী হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮১ বাংলাদেশী। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮৩ হাজার ৬৭৪, কাতারে ১৭ হাজার ২০৪, কুয়েতে ১৩ হাজার ৫৯৯ ও সিঙ্গাপুরে ৪৮ হাজার ২২৫ বাংলাদেশী নতুন অভিবাসী হয়েছেন। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের সন্ধানে বিদেশে গিয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন। ২০২১ সালেও শ্রমিক হিসেবে বিদেশে গিয়েছিলেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ বাংলাদেশী।
শ্রমবাজারে নতুন করে যুক্ত হওয়া রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশীর উপার্জিত অর্থের গন্তব্য নিয়েই এখন নানা প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীরা ঠিকই দেশে থাকা স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে তারা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অবৈধ হুন্ডিকে। এতে স্বজনরা উপকৃত হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, জ্বালানি তেলসহ চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সুবিধাভোগী হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এর পরও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া রহস্যজনক। এছাড়া হুন্ডির বাজার চাঙ্গা হওয়ার কারণেই দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছে বলে মনে তিনি। এক বাজারে ডলারের এত ধরনের দর হুন্ডি তত্পরতাকেই উৎসাহিত করছে।
আরো পড়ুন:
ওমানে সিগারেট সেবনে নতুন নিষেধাজ্ঞা
নোয়াখালীতে ওমান প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে ওমান থেকে আনা হচ্ছে এলএনজি
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করলো সরকার
সৌদিতে কর্মী পাঠাতে জটিলতা, নিতান্তই ভুল বোঝাবোঝি বললেন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post