করোনার সময় ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়। চলতি বছর (২০২২ সাল) তা তুলে নেওয়া হয়। এরপরও অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করছেন না। ফলে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। মন্দ এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে গিয়ে বড় আকারের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১২ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক; বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।
২০২২ সালের জুন শেষে বিশেষায়িত খাতের দুটিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৩১ কোটি ৩৫ টাকা
আরো পড়ুন: ওমানে যুগান্তকারী আইন, স্পন্সর ছাড়াই ব্যবসা করতে পারবে প্রবাসীরা
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এর বাইরে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ন্যূনতম যে মূলধন থাকা প্রয়োজন তা ১২ ব্যাংকের নেই।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পর এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে তাদের মূলধন সংকট চলছে। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অনিয়ম এবং বেশি সুদে তহবিল নিয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়ায় ঘাটতিতে পড়েছে। অন্যদিকে, অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
আরো পড়ুন: হুন্ডি কী বা হুন্ডি কাকে বলে ?
ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানতের অর্থ থেকে ঋণ প্রদান করে। সেই ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করতে না পারা এবং লাগামহীন খেলাপি ঋণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে করতে পারছে না। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে তারা।
বিশেষায়িত খাতের দুটিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ১৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রণী ব্যাংকের। ঘাটতি দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ১২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের এক হাজার ৬০৩ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা
নিয়ম অনুযায়ী যে ব্যাংকের খেলাপি বা মন্দ ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংককে তত বেশি মূলধন রাখতে হয়। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালজুড়ে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালেও ছিল বিশেষ সুবিধা। কিস্তি পরিশোধে পেয়েছেন বড় ছাড়। চলতি বছর ছাড় উঠে গেছে কিন্তু গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ না করার রেশ কাটেনি এখনও। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে সোয়া লাখ কোটি টাকার নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
তিন মাস আগেও অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছিল ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
এছাড়া এক বছরে অর্থাৎ গত বছরের (২০২১ সাল) জুনের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ফলে বেড়েছে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা।
খেলাপি ঋণ কমাতে হলে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপি গ্রাহকদের ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ, কয়েক বছর ধরে ছাড় পেতে পেতে এমন অবস্থা হয়েছে, খেলাপিরা এখন মনে করছেন যে আমি ঋণ পরিশোধ না করলে আগামীতে আরও ছাড় পাব। তাই প্রথমে খেলাপিদের ছাড় বন্ধ করতে হবে। আদায় বাড়াতে হবে। যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে বললেন এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, অর্থনীতির বিশ্লেষক।
মূলধন ঘাটতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতির বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ যত বাড়বে এর বিপরীতে তত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। বাড়তি এ অর্থ রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
‘এখন খেলাপি ঋণ কমাতে হলে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপি গ্রাহকদের ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ, কয়েক বছর ধরে ছাড় পেতে পেতে এমন অবস্থা হয়েছে, খেলাপিরা এখন মনে করছেন যে আমি ঋণ পরিশোধ না করলে আগামীতে আরও ছাড় পাব। তাই প্রথমে খেলাপিদের ছাড় বন্ধ করতে হবে। আদায় বাড়াতে হবে। যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরো পড়ুন: অর্থবছরের শুরুতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে প্রবাসী আয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে বিশেষায়িত খাতের দুটিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ১৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রণী ব্যাংকের। ঘাটতি দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ১২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের এক হাজার ৬০৩ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
আরো পড়ুন: ডিজিটাল হুন্ডির ফাঁদে আটকে যাচ্ছে রেমিট্যান্স
বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ২১২ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ২৬৩ কোটি এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঘাটতি দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সবমিলিয়ে ২০২২ সালের জুন শেষে ১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৩১ কোটি ৩৫ টাকা। মূলধন ঘাটতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তারিক মোর্শেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪২৫ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে (২০২২ সাল) আমাদের মোট ঋণ এবং অগ্রিম খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ যা ছিল তাতে মূলধন ঘাটতির কোনো প্রশ্নই আসে না।’
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট
আরো পড়ুন:
ব্ল্যাক আউট ওমান, চরম দুর্ভোগে মানুষ
অর্থবছরের শুরুতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে প্রবাসী আয়
কুয়েতে নতুন নির্দেশনা অমান্য করলে গুনতে হবে জরিমানা
বিমানবন্দরে আর ট্রলির সমস্যা হবে না, জানালেন বিমান প্রতিমন্ত্রী
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post