প্রথমবারের মতো নিজের দেশে তৈরি বিমানবাহী রণতরী উদ্বোধন করলো ভারত। গত ২ সেপ্টেম্বর দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কোচিন শিপইয়ার্ডে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রণতরীটির উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতেই তৈরি হওয়া এই রণতরীর নাম আইএনএস বিক্রান্ত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এটির ওজন ৪৫ হাজার টন এবং এটি নির্মাণে ভারতের খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি রুপি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ২৬২ মিটার উঁচু, ৬২ মিটার চওড়া আইএনএস বিক্রান্ত ভারতে তৈরি সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ। এই রণতরীতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ক্রু সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রণতরীটিতে ৩০টি বিমান ওঠানামা করতে পারবে। মিগ-২৯কে-র মতো যুদ্ধবিমানও ওঠানামা করার সুবিধা থাকবে এই যুদ্ধজাহাজে।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই রণতরী নির্মাণের কাজ চলে। গত বছরের আগস্টে ‘সি ট্রায়াল’ শুরু করা হয়েছিল। প্রায় এক বছর ধরে এই ‘ট্রায়াল’ প্রক্রিয়া। এটির ‘হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত ‘থ্রটল কন্ট্রোল রুম’, যেখান থেকে গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনগুলো পরিচালিত হবে। রণতরীটিতে থাকা চারটি ইঞ্জিন একসঙ্গে ৮৮ মেগাওয়াট শক্তি তৈরি করে। এই পরিমাণ শক্তি একটি শহরের জন্য যথেষ্ট।
ফ্লাইট ডেকের আকার প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। তাঁরা একবারে ১২টি যুদ্ধবিমান ও ৬টি হেলিকপ্টার চালাতে পারবেন। রণতরীটির হ্যাঙ্গারে রাশিয়ায় তৈরি দুটি যুদ্ধবিমান দেখা যায়। যার মধ্যে একটি মিগ-২৯কে ফাইটার। রণতরিটিতে তিনটি গ্যালি বা প্যান্ট্রি রয়েছে। সেখানে কফি বানানোর যন্ত্র, টেবিল ও চেয়ার আছে। সমস্ত গ্যালিগুলোকে এক করলে প্রায় ৬০০ জন ব্যক্তি একসময়ে এখানে তাঁদের খাবার খেতে পারবেন।
এতে দুটি অস্ত্রোপচার কক্ষ সহ ১৬ শয্যার একটি হাসপাতাল আছে। এ ছাড়া আছে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিজয় শিওরান বলেন, এটা একটি পার্কিংয়ের জায়গার মতো। এখানে একটি দল উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করবে। এখান থেকেই বিশেষ লিফট উড়োজাহাজকে ফ্লাইং ডেকে নিয়ে যাবে।
পরিষেবায় যুক্ত হয়ে এ রণতরী ভারতের নৌবাহিনীর শক্তি আরও বাড়াল। বিশ্বের মাত্র হাতে গোণা কয়েকটি দেশের এমন রণতরী তৈরির সক্ষমতা আছে। যুক্তরাজ্য এবং চীনের পর ভারতই প্রথম তৃতীয় দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিতে তৈরি করল বিমানবাহী রণতরী। রটি ৩০টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। যার মধ্যে মিগ-২৯কে ফাইটার জেট এবং হেলিকপ্টারের উঠানামার সুবিধা রয়েছে।
আইএনএস বিক্রান্তের দৈর্ঘ্য ২৬২ মিটার। এই তরী ৬২ মিটার চওড়া এবং ৫৯ মিটার উঁচু। জাহাজটির উপরের ভাগে বিমান উড়ানের জন্য যে রানওয়ে আছে, তার দৈর্ঘ্যও ৯০ মিটারের বেশি। এতে ১,৭০০-রও বেশি সেনা এবং কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪টি ডেক রয়েছে এই রণতরীর। আর রয়েছে ২৩০০টি কামরা। চারটি গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন দিয়ে রণতরীটি চলবে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২৮ নটিক্যাল মাইল (৫২ কিলোমিটার)। বার বার জ্বালানি ভরার দরকারও নেই বিক্রান্তে। এক বার জ্বালানি ভরা হলেই সাড়ে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে পারবে এই যুদ্ধজাহাজ।
আরো পড়ুন:
মারা গেলেন ওমান প্রবাসী আপন চার ভাই
‘প্রবাসীদের রেমিট্যান্স-যোদ্ধা বলে লাভ নেই’
ওমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মাদকের চালান ধরলো সৌদি
স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিলো বাজুস
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post