দেশে স্বর্ণের চোরাচালান বৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স কমছে। শুধু চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করে বৈধভাবে সোনার বার আনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সাড়ে ৩২ শতাংশ। এতে সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। চোরাচালান বন্ধ করতে সরকার শুল্ক দিয়ে সোনার বার ও স্বর্ণালংকার আনার সুযোগ দিয়েছে আগেই। উদ্দেশ্য, বৈধভাবে সোনা আমদানিতে উৎসাহ দেওয়া।
কিন্তু শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আনা যে পরিমাণ সোনা জব্দ করা হয়েছে তা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ সুযোগ দেওয়ার পরও অবৈধভাবে সোনা দেশে আসছে। আর যে পরিমাণ সোনা ধরা পড়ছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি আসে বলে প্রচলিত ধারণা আছে।
এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনটি কারণ জানা গেছে। এক. বর্তমান ব্যাগেজ রুলসে আইনের অস্পষ্টতা। দুই. ডলারের দামের তারতম্যের কারণে বাড়তি মুনাফা। তিন. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কড়াকড়ির অভাব। এ অবস্থায় সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বদলে ব্যাগেজ রুলস কাজে লাগিয়ে সোনা আনায় ঝুঁকছে কেউ কেউ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলসে বৈধভাবে শুল্ক পরিশোধ করে এক ভরি স্বর্ণ এনে দেশে বিক্রি করলে প্রবাসীরা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মুনাফা করতে পারেন। কিন্তু বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে সেই পরিমাণ লাভ তাঁরা পান না। তাই রেমিট্যান্সের বদলে সোনার বার আমদানির প্রবণতা বাড়ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বৈধ পথে দুইভাবে সোনা আমদানি করা যায়। ২০১৮ সালের স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে আমদানি করতে পারে। আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সোনা ও সোনার বার শুল্ক পরিশোধ করে আনতে পারবে। ব্যাগেজ আইনে বলা আছে, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ দুটি সোনার বার (২৩৪ গ্রাম বা ২০ ভরি ওজন) ঘোষণা দিয়ে আনতে পারবেন।
প্রতি ভরিতে দুই হাজার টাকা হিসাবে মোট ৪০ হাজার ১২৪ টাকা শুল্ক পরিশোধ করে একজন যাত্রী সোনার বার আনতে পারবেন। এর বাইরে ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে আনতে পারবেন, তবে সেটি ২২ ক্যারেটের হতে হবে। ২৪ ক্যারেট হলে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ১০০ গ্রামের বেশি স্বর্ণালংকার আনলে সেটি কি শুল্ক পরিশোধ করে ছাড় হবে, নাকি অবৈধ হবে, সেটি ব্যাগেজ রুলসে স্পষ্টভাবে বলা নেই। বর্তমান ব্যাগেজ রুলসের এই দুর্বলতা অবৈধ সোনা আসার একটি কারণ। এই কারণে এই রুলসের সংশোধনের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
কিন্তু কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নেয়ামুল ইসলাম বলছেন, ‘ব্যাগেজ রুলসে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালংকার আনার বিধান আছে। এর বেশি হলে তিনটি বিমানবন্দরের জন্য একটি নিয়ম প্রযোজ্য আছে, যেটা বিধানে নেই। সেটি হলো, ১০০ গ্রামের বেশি স্বর্ণালংকার আনলে প্রতি গ্রামের জন্য দুই হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হবে। আমরা আগে থেকেই সেই নিয়ম প্রয়োগ করে আসছি।’ তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে রেমিট্যান্স কমার পেছনে বৈধভাবে সোনার বার আনাকেও একটি কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারণ এতে প্রতি ভরিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মুনাফার সুযোগ আছে।
আরো পড়ুন:
পদ্মাসেতু: রডের দৈর্ঘ্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার চেয়ে বেশি
ঢাকা বিমানবন্দরে নারীর বিশেষ অঙ্গ থেকে ৮ সোনার বার উদ্ধার
ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ জানালো আমিরাত
শ্রমিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
দুবাই থেকে কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরলো প্রবাসী বাবুল
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post