নিজেদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে এবার এক হয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব-তুরস্ক-ইরান, ওমান সহ বিশ্বের মুসলিম দেশ সমূহ। মুসলিম বিশ্বের এমন পদক্ষেপকে নয়া যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে দুর্বল হয়ে পড়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সৌদি আরব সফর শুরু করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান। এই সফর শুরুর আগে তিনি সৌদি আরবকে ‘ভ্রাতৃপ্রতীম’ দেশ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের নতুন যুগ শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, সৌদি বাদশাহ সালমানের অনুরোধে দেশটি সফরে গেছেন এরদোয়ান। সম্পর্ক উন্নয়নের কয়েক মাসের চেষ্টার ফলে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অপরদিকে গতকাল ২৩ মে ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিকের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে ওমান গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি। তার এ সফরকে কেন্দ্র করে বহুল আলোচিত ইরান-ওমান গ্যাসলাইন আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এই প্রস্তাবিত পাইপলাইনের মাধ্যমে সাগরের নিচ দিয়ে দিয়ে ইরানের গ্যাস যাবে প্রতিবেশী দেশ ওমানে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সংকটের মধ্যে আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে বহুদিন আগের এই হারিয়ে যাওয়া প্রকল্প। ওমানের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২৩ মে ওমানের সুলতানের রাজপ্রাসাদে মোট ১২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।
জ্বালানি, পরিবহণ, পর্যটন, ক্রীড়া, পরিবেশ, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা শক্তিশালী করতে দুই দেশের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও ওমানের সুলতান হাইসাম বিন তারিক আল সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ওমানের সুলতান তার আল আলম প্রাসাদে ইরানের প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং প্রেসিডেন্ট রাইসিকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের সম্মান জানানোর জন্য ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার একদিনের ওমান সফর শেষে সোমবার রাতেই তেহরানে ফিরে গেছেন।
গত বছরের আগস্ট মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে রাইসি পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করাকে তার সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ বলে ঘোষণা করেন। তার সরকারের ওই নীতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইরানের শুল্ক অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বিগত ফার্সি বছরে ইরান ও ওমানের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ১৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি।
এর আগে চলতি মাসের ১২ মে ইরান সফরে যান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা এবং ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানের পর জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো সফর করবেন কাতারের আমির।
আরো পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ওমানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ
বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তারা বলছেন, তুরস্কের অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবে সহায়তা দিতে পারে সৌদি আরব। আগামী বছরের কঠিন নির্বাচনের মুখে রয়েছেন এরদোয়ান। এর মধ্যে বাড়তি মুদ্রাস্ফীতির চাপে রয়েছে তুরস্কে অর্থনীতি। সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন এই সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্ক উন্নয়ন, রাজনৈতিক, সামরিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরালো করা। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে বলে জানান এরদোয়ান।
আরো পড়ুন: ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জসিম
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুল দূতাবাসে খুন হওয়া সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি-তুরস্কের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। সম্প্রতি এই মামলার বিচারের ভার সৌদি আরবের কাছে হস্তান্তর করেছে তুরস্কের আদালত। আঙ্কারা আশা করছে এরদোয়ানের সফরের মধ্য দিয়ে তুরস্কের পণ্য আমদানির ওপর সৌদি আরবের অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে। তুরস্কের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এরদোয়ানের সফর ঘিরে খুবই ইতিবাচক পরিবেশ বিরাজ করছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক ইস্যুতে ফের যৌথভাবে কাজ শুরু করার মতো ভিত্তি প্রস্তুত হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে ইউক্রেন আক্রমণের জেরে রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বড় সংকটে রয়েছে ওয়াশিংটন। এই সংকট কাটাতে রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পাশে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফোনই ধরছেন না। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ-আল-নাহিয়ান উভয়ই বাইডেনের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সময়ের মুসলিম বিশ্ব পূর্বের তুলনায় বেশ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। এভাবে এগোতে থাকলে মুসলিম বিশ্বে নয়া যুগের সূচনা ঘটবে।
আরো পড়ুন:
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
করোনা মোকাবিলায় ওমানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post