চলে গেলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা ও বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর দাফনের জন্য মরদেহ নেওয়া হবে সিলেটে। রায় নগরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে উড্রো উইলসন স্কুলে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মুহিত। তিনি ২ মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ জানুয়ারি ৬ তারিখে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর বাজেট উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত এ পর্যন্ত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন, যার ১০টি আওয়ামী লীগ সরকার আমলের। নিন্মে উল্লেখ করা হোল তার উপস্থাপন করা ১২টি বাজেট
মুহিতের জীবনের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। যেটা তিনি এরশাদ সরকারের ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
পরের ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
আর তৃতীয় বাজেট ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সরকারে অধীনে ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ওই বছর আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
দেশের ৩৯তম ও তার ঘোষিত চতুর্থ বাজেট ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
পঞ্চমবারের মতো ২০১১-১২ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষিত বাজেট ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার।
পর্যায়ক্রমে ৬ষ্ঠ বার ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে মুহিত ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।
৭ম বাজেট ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আকার ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
৮ম বাজেট ছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরের। আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই অর্থবছরে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।
তার জীবনের ৯ম ও দেশের ৪৪তম বাজেট ঘোষণা হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের। যার আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১০ম বাজেট ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরের। আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। যা ছিল তার জীবনের ১১তম বাজেট।
তার জীবনের শেষ বাজেট ও দেশে ৪৭তম ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষিত শেষ বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজের শেষ কর্মদিবসে এক বিদায়ী অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি আমার জন্য খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি।’
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের ১৪ সন্তানের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই। লেখক হিসেবেও খ্যাতি ছিল এই রাজনীতিবিদের। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যাসহ নানা বিষয়ে তার ২২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পবিত্র কোরআন শরীফ কীভাবে ছাপা হয়?
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
স্বামীকে ফিল্মিস্টাইলে অপহরণ করলেন স্ত্রী
প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post