দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডায়রিয়া ও কলেরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি। এ প্রসঙ্গে গতকাল (২৪-এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দেশে ডায়রিয়ার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। আর ডায়রিয়া বা কলেরা যদি আরও বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে দুবাই, কাতার, আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি পাঠানো স্টপ (বন্ধ) রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতার কথা বলেছে ওই সব দেশ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে পারলেও ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এর আগে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করেছি, কিন্তু এখন ডায়রিয়া নিয়ে নাকাল হচ্ছি। কোভিড সামাল দিলেও ডায়রিয়া পারছি না।
এদিকে গত বছর করোনাকালে বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তখন অনেকেই বিভিন্ন খাবার গ্রহণ করেছে। ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় তারা। যাত্রা বন্ধ না করে ওইসব যাত্রী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।
আরো পড়ুন: স্বামীকে ফিল্মিস্টাইলে অপহরণ করলেন স্ত্রী
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, গত করোনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের সময় মধ্যপ্রাচ্যগামী অনেক যাত্রী ডায়রিয়া নিয়ে ওই সব দেশে গেছেন। হয়তো ওই সব যাত্রীরা বিমানবন্দরের বাইরের খাবার খেয়েছেন বা না খেয়েই বিমানে উঠেছেন, তখন ডায়রিয়া হয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ জনশক্তি নেয়ার ক্ষেত্রে ওই সময় এমবার্গ দিয়েছিল।
দেশে এখন ডায়রিয়া বা কলেরার এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ওই সব দেশের আগের এমবার্গের কথায় মাথা নিয়ে এগুচ্ছি। মহাপরিচালক আরও জানান, ফরিদপুর ও উপকূলীয় জেলায় ডায়রিয়া বাড়ছে। তাই তাড়াতাড়ি কলেরার ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়ার চিন্তা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, গত তিন মাসে দেশে ৫ লাখের কাছাকাছি মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডায়রিয়া চলতি বছর মারা গেছে ৪ জন। তবে আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা বলেছে ২৯ জন মারা গেছে ডায়রিয়া। ১৩ই এপ্রিল ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব এবং মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন নিয়ে ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ডায়রিয়ায় দেশে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আইসিডিডিআর,বি বলছে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। তিনি জানান, চলতি বছরে রাজধানী ঢাকায় ২৩ লাখ মানুষকে কলেরার টিকা দেয়া হবে।
আরো পড়ুন: প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি মাসেই ভর্তি হয়েছেন ২৭ হাজার ১৬৫ জন। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব মতে, সারা দেশে বছরের প্রথম তিন মাসে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫৫ হাজার ৯২৬ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতাল। ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে।
এই বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৭ জন।
আরো পড়ুন: প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৪০৬ জন। আট বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে কমেছে। অন্য সব বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের এই হিসাবের চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু সরকারি হাসপাতাল ও আইসিডিডিআরবির মহাখালী হাসপাতালের তথ্য দেয়। অনেক রোগী চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নেয়। এ ছাড়া সাধারণ ডায়রিয়ায় অনেকে নিজে স্যালাইন কিনে খায়।
আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন ধরনের রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। কিছু রোগীর শরীরে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা যাচ্ছে। কিছু রোগীর পানিশূন্যতা আংশিক। কিছু রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও পানিশূন্যতা দেখা যাচ্ছে না।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
কলেরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শনির আখড়া ও দক্ষিণখান এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে। প্রায় সবারই অভিযোগ, তারা বাসায় যে পানি পান করছে, সেখান থেকেই সমস্যা হয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকেও রোগী বেশি আসছে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, পানি দূষণের কারণেই রাজধানীতে ডায়রিয়া বেড়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ পানি দূষণ। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
পবিত্র কোরআন শরীফ কীভাবে ছাপা হয়?
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post