টাকা ধার করে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গত ডিসেম্বরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার সজিব চন্দ্র দাস (২২)। সৌদি আরব গিয়ে সেখানে শ্রমিকের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে গত ১৩ মার্চ হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান সজিব চন্দ্র। মৃতদেহ দেশে আনতে হাসপাতালের খরচসহ অন্যান্য খরচ বাবদ পরিবারকে প্রদান করতে হবে সাত লাখ টাকা। কিন্তু অসহায় পরিবারের পক্ষে এতো টাকা যোগাড় করা অসম্ভব। তাই নিরুপায় হয়েই মরদেহ সৌদিতেই দাফন করার লিখিত অনুমতি দিয়ে দেয় সজিবের পরিবার।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে চলতি মাসের ৫ এপ্রিল প্রথম আলোতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে নজরে আসে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক মাইগ্রেশনের। এ ব্যাপারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ইনফরমেশন সেন্টারের কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন বলেন, “অর্থের অভাবে প্রবাসীর লাশ আনতে পারছে না পরিবার” শিরোনামে চলতি মাসের ৫ এপ্রিল প্রথম আলোতে নিউজ প্রকাশিত হলে নিউজটি আমাদের নজরে আসে। একজন বৈধ কর্মীর ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারেনা, বিষয়টি হৃদয়বিদারক।”
এরপর প্রথম আলো প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে মৃতের পরিবারকে মরদেহ দেশে ফেরত আনতে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সহায়তার কথা জানানো হয়। বিষয়গুলো জানার পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে মরদেহ সরকারী খরচে দেশে ফেরত আনতে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করা হয়। এরপর গত ১০ এপ্রিল পরিবারকে নিয়ে আসা হয় ব্র্যাক ইনফরমেশন সেন্টারে। একইদিন মরদেহ দেশে ফেরত আনতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে লিখিত আবেদন করতে সহায়তা করা হয়ে মৃতের পরিবারকে।
এরপর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও দূতাবাসে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ফলোআপ করা হয় মরদেহ দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরত আনতে। অবশেষে সকল বাধা পেরিয়ে গতকাল (১৪ই এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় সৌদি আরব থেকে সরকারী খরচেই দেশে ফিরে তার মরদেহ।
সজিব চন্দ্রের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী গ্রামে। সজিব চন্দ্রের বাবা যুগল চন্দ্র উপাদী এলাকার শান্তিনগর বাজারে ধোপার কাজ করেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সজিব চন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বেকার ছিলেন। কাজের আশায় গত ডিসেম্বরে তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে কয়েক মাস কাজ করার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গত ১৩ মার্চ সেখানকার ভাড়া করা বাসায় সজিবের মৃত্যু হয়। তাঁর এ অকাল মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে ঋণের বোঝায় সজিবের পরিবার হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। সজিবের বাবা যুগল চন্দ্র বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। একটি লন্ড্রি চালিয়ে সামান্য যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে। বেকার ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন নিয়ে ঋণ করেই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুতে সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন:
পবিত্র কোরআন শরীফ কীভাবে ছাপা হয়?
কাতারে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশি হাফেজ
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই বিমানের সংঘর্ষ
সবাই আমার স্ত্রীকে চোরের বউ বলে আমাকে জামিন দেন
ওমানে বাড়লো প্রবাসীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
তুরস্কের হায়া সোফিয়ায় ৮৮ বছরে প্রথম তারাবি হতে চলেছে
হিজাব ইস্যুতে মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে: মিস ইউনিভার্স
প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post