আশরাফুল ইসলাম রানা, বিশেষ প্রতিনিধি
চার মাস ধরে টিকেটের দামে প্রবাসীদের গলা কাটছে এয়ারলাইনসগুলো। সংশ্লিষ্ট সবাই দাবি করে আসছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে দরিদ্র শ্রমিক পথে বসছে। অথচ দীর্ঘ সময়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। এমনকি ক্ষতিয়েও দেখেনি কারা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত? তবে এবার একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে টিকেটের দাম বাড়ার কারণ?
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রুপ টিকেট বুকিং নামে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকের লাখ লাখ টাকা খসাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন জড়িত।
গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে অনেক দিন বিমান যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সেটা আবার চালু হওয়ার পর ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করে। একই সঙ্গে নতুন কর্মীও যাওয়া শুরু হয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটে যাত্রীর চাপ ব্যাপক বেড়ে যায়। ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিভিন্ন এয়ারলাইনসের দৈনিক যাত্রী পরিবহনক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার। তবে টিকেটের চাহিদা রয়েছে ৮ হাজার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দারা বলছেন, এয়ারলাইনসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও একশ্রেণীর ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট বিক্রির সার্ভারে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ধাপে ধাপে টিকিট উন্মুক্ত করা হয়। ফলে এসব টিকিট সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে থেকে যায়। এরই মধ্যে অসাধু চক্রগুলো কালোবাজারে টিকিটের দাম তিন-চার গুণ বাড়িয়ে দেয়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিভিন্ন এয়ারলাইনস অসাধু ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে ভুয়া ডকুমেন্টসের বিপরীতে গ্রুপ টিকিট বুকিং দিয়ে রাখে। কোনো এয়ারলাইনস যখন কোনো গ্রুপ টিকিট বিক্রি করে, তখন তার সিস্টেমে ওই টিকিট বিক্রীত বলে দেখানো হয়।
গ্রুপ টিকিটে সাধারণত সর্বনিম্ন দামের টিকিট বিক্রি করা হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সিস্টেমে যখন টিকিট কিনতে সার্ভারে প্রবেশ করেন, তখন অল্পসংখ্যক উচ্চ মূল্যের টিকিট দেখানো হয়। উচ্চ মূল্যের টিকিট বিক্রি শেষ হলে অসাধু ট্রাভেল এজেন্টরা তাদের গ্রুপ টিকিট উচ্চ দামের টিকিটের সমদামে বা আরও বেশি দামে বিক্রি করেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পাশের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিক বেশি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে মোট যাত্রীর প্রায় ২৫ শতাংশ পরিবহন করে থাকে। বাকি যাত্রীরা দেশি-বিদেশি অন্যান্য এয়ারলাইনসে যাতায়াত করেন। সাম্প্রতিককালে প্রবাসী কর্মীদের চাপ বাড়লেও বিমান কর্তৃপক্ষ মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেনি। ফলে মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকরা মহাদুর্ভোগে পড়েন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post