সম্প্রতি ইতালিতে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে সিজনাল ও স্পন্সর ভিসার ডিক্রি ও গেজেট প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপন। বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশ থেকে ৬৯ হাজার ৭০০ জন অভিবাসী কর্মী আনার অনুমতি দিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি ডিক্রি জারি করে ইতালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যেখানে কোন খাতে কতজন এবং কোন কোন দেশ থেকে আসতে পারবেন সেটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
জারিকৃত ডিক্রিটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ১৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে। প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী নন সিজনাল ওয়ার্কার, স্টার্ট আপ বা উদ্যোক্তা ভিসায় ইতালিতে আসতে আগ্রহীরা ২৭ জানুয়ারি থেকে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে পারবেন।
অপরদিকে সিজনাল বা মৌসুমি ভিসার আবেদন করা যাবে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে। উভয় ক্ষেত্রে আবেদনের সময়সীমা থাকবে ১৭ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত। এই কাজের ভিসাগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, উত্তর কোরিয়া, আইভরি কোস্ট এবং মিশর থেকে আসা অভিবাসী কর্মীদের দেওয়া হবে।
ইতালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোট ভিসার মধ্যে ১৪ হাজার কোটা কৃষিখাতের মৌসুমি বা সিজনাল ভিসার জন্য নির্ধারিত থাকবে। এছাড়া ২৬ হাজার কোটা স্পন্সর ও উদ্যোক্তা ভিসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে যার মধ্যে ২০ হাজার কোটা নির্মাণখাত, সড়ক ও যোগাযোগ এবং হোটেল রেস্তোরাঁর জন্য বরাদ্দ থাকবে।
ইতালি বা যেকোন দেশে কর্মী নিয়োগের কোনো সার্কুলার দেওয়া হলে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী বেশিরভাগ আবেদনকারী সাধারণত বেসরকারি এজেন্সিগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশগুলোর মতো ইতালিতে চাইলেই কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যায় না।
কৃষি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতসহ সার্কুলারে তালিকাভুক্ত খাতগুলোতে মৌসুমি ও স্পন্সর উভয় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন একমাত্র নিয়োগকর্তা। অর্থাৎ, ইতালিতে কৃষি বা অন্যান্য খাতে ব্যবসা করছেন এমন কোনো মালিক যদি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মীর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তিনি আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য ও যাবতীয় সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করবেন।
সরকার যাচাই বাছাই করে আবেদন মঞ্জুর করলে পরবর্তীতে নিয়োগকর্তা ভিসাসহ অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য আবেদনকারীকে অবহিত করবেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আবেদনকারীরা ইতালির বেতন কাঠামো এবং যাবতীয় তথ্য যাচাই না করেই অনেক সময় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান।
পরবর্তীতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ইতালিতে এসেছেন সেটি তার পুরো বছরের বেতনের সমান বা তার থেকেও কম। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছেন যারা তাদের ব্যবসায় প্রয়োজনীয় কর্মী না লাগার পরেও শুধু মৌসুমি মুনাফা লাভের আশায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে লোকজনকে ভিসার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন।
যেখানে একটি মৌসুমি ভিসার মেয়াদ থাকে মাত্র ছয় মাস সেখানে চুক্তিতে থাকা কর্মঘণ্টার দ্বিগুণ কাজ করার পরেও একজন ব্যক্তির পক্ষে এত বিশাল অংকের টাকা আয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এছাড়া অনেক অভিবাসীকে মৌসুমি ভিসার মেয়াদের পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বলা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে তারা বিপদে পড়েন। বসবাসের অনুমতি দেওয়ার যৌক্তিক কারণ না থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে তাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এরই মধ্য়ে গ্রিস ও জার্মানি থেকে এমন অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে।
কোনো আবেদনকারী যদি যথাযথ নিয়োগকর্তা যোগাড় করতে সক্ষম হোন তাহলে আবেদনের পাশাপাশি তিনি যে কাজের জন্য যাবেন সেই বিষয়ে তার পর্যাপ্ত কারিগরি দক্ষতা এবং ন্যূনতম ইতালীয় ভাষা জানা থাকা উচিত। যেমন কেউ যদি নির্মাণ খাতে সাধারণ বা আধাদক্ষ কর্মী হিসেবে আসতে আগ্রহী হন তাহলে ইতালির আবহাওয়া এবং নির্মাণখাতের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
এটি হোটেল-রেস্তোরাঁ, কৃষিসহ সবখাতে আসতে আগ্রহীদের জন্যই প্রযোজ্য। গত বছরগুলোতে এসব ভিসায় এসে অনেকেই অনিয়মিত অভিবাসীতে পরিণত হওয়ার পর তাদের পুনরায় বৈধতা পেতে বছরের পর বছর সময় লেগেছে। আবার অনেককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে।
সর্বোপরি একজন আবেদনকারীর উচিত সরকারি বেতন কাঠামো এবং থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ সম্পর্কে অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে ভিসার প্রস্তাব দেওয়া নিয়োগকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই অসাধু ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post