মধ্যপ্রাচ্যে আবার শুরু হয়েছে উত্তেজনা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গতকাল হামলার পর হুহু করে বাড়ছে তেলের দাম। গতকালের হামলায় আমিরাতে ৩ জন মারা যাওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার হুংকার জানিয়েছে আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এই উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে।
ওমানে আবারও বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের মূল্য। বর্তমানে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ৮৭ ডলার। সম্প্রতি সময়ে এই দাম ওমানের সর্বোচ্চ। টাইমস অব ওমানের এক প্রতিবেদনে দেশটির অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ডক্টর মোহাম্মদ আল ওয়ার্দি জানিয়েছেন, “বেশ কিছুদিন ধরে ওমানে একচেটিয়া তেলের দাম কমছিলো। কিন্তু হঠাৎ গতকাল থেকে এই দাম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দুবাই মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের (ডিএমই) তথ্য অনুযায়ী অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৬.৭০ ডলার।যা গতকাল এই অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিলো ৮৫.৯৭ ডলারে।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৭ দশমিক ৮৫ ডলার। একই সঙ্গে ইউ.এস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ফিউচারের দাম ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৫৬ ডলার। এতে এই ধরনের তেলের দাম ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই জ্বালানি বিশ্লেষকেরা শঙ্কা করছিলেন, তেলের দাম আবারও বাড়বে। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা এমনটা বলেছিলেন। তবে আরব আমিরাতে এই হামলার ঘটনায় সৌদি আরব বলেছে, তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা চালিয়ে যাবে।
এদিকে হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল কোম্পানি অ্যাডনক বলেছে, এখনো তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় এবার তীব্র শীত পড়ায় ঘর গরম রাখতে জ্বালানির চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেও জ্বালানির দাম বাড়ছে।
মহামারির শুরুতে জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম শূন্যেরও নিচে চলে গিয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম এখন সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। কয়েক মাস আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজারে তেল ছেড়ে সরবরাহ বৃদ্ধির চেষ্টা করে। চীন ও ভারতও একই পথে হাঁটে। এতে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ছেদ পড়ে। এ ছাড়া ওপেকও দিনে অতিরিক্ত চার লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং ওপেকসহ সহযোগী দেশগুলো সরবরাহ বৃদ্ধির অঙ্গীকার রাখতে না পারলে জ্বালানির দাম আবারও ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে তেলের বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়ছে সারা বিশ্বে। কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যেও এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, হাইড্রোজেন পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়। ২০২১ সালে বিশ্বে হাইড্রোজেন বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের। রয়টার্স, ন্যাশনাল নিউজ সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post