বাংলাদেশ থেকে নিউ ইয়র্কের চেয়েও বেশি মূল্যে বিমানের টিকিট কিনতে হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের। বর্তমানে লাখ টাকার উপরে শুধুমাত্র ওয়ানওয়ে রুটের টিকিট কিনছেন প্রবাসীরা। দুবাইর রিটার্ন টিকেটের মূল্য এখন ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা! বিমানের এমন আকাশচুম্বী টিকিটের মূল্য প্রসঙ্গে টিকিট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত যেসব আসনের ভাড়া কম, সেগুলো দ্রুত বিক্রি হতে থাকলে ভাড়া আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। মানে টিকিটের চাহিদা বেশি, তাই ভাড়া বেশি। কিন্তু আসন খালি থাকার পরও ভাড়া কিভাবে বেশি দেখায়, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এয়ারলাইনস আগে থেকেই বিভিন্ন ফ্লাইটের বেশ কিছু টিকিট কিনে রাখে। এটা এক ধরনের ‘কারসাজি’। গ্রুপ টিকিটের আড়ালে এই টিকিট সস্তায় কিনে আসন ব্লক করে রাখা হয়। পরে তারা বিভিন্ন ব্যক্তিকে একটি গ্রুপে দেখিয়ে বেশি দামে সেই টিকিট ইস্যু করে।
খোজনিয়ে দেখাগেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু রুটে বিমানের অধিকাংশ আসন খালি রেখেই যাত্রা করেছে। বিমানের আসন খালি থাকলেও কোন যৌক্তিকতায় টিকিটের মূল্য বাড়ছে এর কোনো উত্তর মেলেনি। সৌদি আরব থেকে ছয় বছর পর দেশে ফিরবেন নওগাঁর মো. মফিদুর রহমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট পেতে তাঁকে রিয়াদে বেশ কয়েক দিন ঘুরতে হয়েছে। কারণ টিকিট নেই। শেষে টিকিটের সুরাহা হলেও ভাড়া শুনে আঁতকে উঠলেন। আসা-যাওয়ার জন্য তাঁকে গুনতে হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। করোনার আগে এই ভাড়া ছিল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
কষ্টেসৃষ্টে জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কিনলেন মফিদুর রহমান। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর বিজি ৪০৪০ ফ্লাইটে উঠে দেখলেন, বিমানের অর্ধেকের বেশি আসন খালি। মফিদুর রহমানের এই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায়, ওই দিন বিজি ৪০৪০ ফ্লাইটে ৩২০ আসনের বিপরীতে রিয়াদ থেকে যাত্রী ছিল ২১৪ জন। অর্থাৎ ১০৬ আসনই খালি এসেছে। এর মধ্যে ২০৮ জন যাত্রী ছিল ইকোনমি ক্লাসে এবং ছয়জন ছিল বিজনেস ক্লাসে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিমানভাড়া তিন গুণের বেশি বেড়েছে। আগে যে ভাড়া ২৫ হাজার টাকা ছিল, তা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা টাকা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যাত্রী পরিবহনে দৈনিক দরকার সাড়ে পাঁচ হাজার আসন। এর বিপরীতে এখন সব এয়ারলাইনস মিলে আসন আছে সাড়ে তিন হাজার। চাহিদা ও জোগানের সংকট কাজে লাগানোর অনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে এখন। এর দায় অবশ্যই এয়ারলাইনসগুলোকে নিতে হবে। কারণ তারা সিন্ডিকেশন করে টিকিট ব্লক করে রাখছে। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এর সঙ্গে যদি কোনো ট্রাভেল এজেন্টের সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তারা তা প্রকাশ করুক।’
হঠাৎ আসনসংকট দেখা দিল কেন, জানতে চাইলে আটাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি আরব ও ইউএই ভিসা দেওয়া বাড়িয়েছে। ওমানসহ আরো কয়েকটি দেশে ভিজিট ভিসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে করোনার নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ফিরতে পারেনি, এখন করোনা কমায় তারা ফিরছে। অনেক প্রবাসী কর্মস্থলে ফিরতে চায়। টিকিট না পেয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা বাড়তি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছে।’
আটাব সভাপতি বলেন, ‘আসনসংখ্যা বাড়াতে আমরা বিমানসহ অন্যান্য এয়ারলাইনসকে বাড়তি ফ্লাইট দিতে বলেছি। আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমরা সমাধান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এখনো আশার আলো দেখছি না।’
মধ্যপ্রাচ্যর যাত্রীদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিদেশি এয়ারলাইনসের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের প্রভাব থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া এ সময়ে কেন অন্তত মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নাগালের মধ্যে রাখা হয়নি, সে প্রশ্ন তুলেছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আটাব জানিয়েছে, ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক ২৩ ঘণ্টার ভ্রমণে ভাড়া লাগছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে ছয় ঘণ্টার ভ্রমণে নেওয়া হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আগে যে টিকিটের মূল্য ছিল ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার, সেই টিকিট এখন লাখ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দুবাইয়ের ভাড়া ছিল ৪০ হাজার, বর্তমানে দুবাই যেতে লাগছে এক লাখের ওপরে। ওমানের মাস্কাটে আগে একমুখী ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার, বর্তমানে সব এয়ারলাইনস ৭২ হাজার টাকা নিচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post