টাকায় কি পাওয়া যায় না এই দেশে? এমন কিছু কি খুঁজে পাবে যা বাংলাদেশে টাকায় পাওয়া যায় না? সত্যি বাংলাদেশে সবই হয় টাকায়। এজন্যই হয়তো গুণীজন বলেছিলেন, টাকা থাকলে বাঘের দুধও পাওয়া যা। তাই তো হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জাল সনদ দেন সাহেদ সাবরিনারা। আবার টাকা নিয়ে কোয়ারেন্টিন না করিয়েই প্রবাসীদের ছেড়ে দেয় হোটেলগুলো। এবার টাকায় নাকি প্রবাসীদের ভুয়া করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে।
কিভাবে এই সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তার একটি ঘটনা বলছি। প্রবাসী পরিচয়ে আলমগীর হোসেন নামে একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ চালান। তার কাছে জানতে চাই, টিকা ছাড়া ভ্যাকসিন কার্ড পাওইয়া যাবে কি-না? আলমগীরের উত্তর, পাওয়া যাবে। তবে টাকা লাগবে ১১ হাজার। রাজি থাকলে পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে বলেন আলমগীর।
আলমগীরের প্রস্তাবে ‘রাজি’ হয়ে গত ৩০ অক্টোবর সকালে আবারও যোগাযোগ করি। হোয়াটসঅ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি পাঠাতে বলেন আলমগীর। অ্যাডভান্স হিসেবে কিছু টাকা পাঠাতে একটি বিকাশ নাম্বার দেন। কথামতো জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দেই। পরে অগ্রিম বাবদ এক হাজার টাকা পাঠানো হয় একটি বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে।
এরপর আরেকটি ফোন আসে। নাম ও জন্মতারিখ যাচাই করে নেন তিনি। কিছু সময় পর পাঠান মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রের নিবন্ধন করা একটি টিকা কার্ড। বিকালের মধ্যেই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট রেডি হয়। বাকি টাকা পরিশোধ করলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভ্যাকসিন সনদ।
তাতে টিকা কেন্দ্রের নাম লেখা মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজ। প্রথম ডোজের তারিখ দেওয়া ২০ জুলাই ২০২১ ও দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২১। ভ্যাকসিনের নামের জায়গায় লেখা মডার্না। আরও অবাক করা তথ্য হচ্ছে, ভুয়া সার্টিফিকেটটির কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা যায় সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে এটি ভ্যালিড বা সঠিক। কি করে এটি সম্ভব?
অনুসন্ধানে জানা চক্রটি শুধু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নয়, টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার তারিখও বদলে দিতে পারে। সশরীরে কারও সঙ্গে দেখা করে না তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকলেও তারা আদৌ কোনও পদে আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই করোনার ভ্যাকসিন না নিলে প্রবেশের সুযোগ নেই।
এ কারণে প্রবাসীদের ছুটতে হচ্ছে টিকার পেছনে। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় পাসপোর্ট দিয়ে দুই ধাপে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। এতে জটিলতা যেমন আছে তেমনি সময়ও নষ্ট হচ্ছে। টিকা নেওয়ার তারিখের মেসেজের জন্য বসে থাকতে হয় তীর্থের কাকের মতো। মাস যায়, তবু মেসেজ আসে না। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে জালিয়াত চক্র।
এর আগে জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদ গ্রেফতার হয়েছিল পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির কারণে। এখন সক্রিয় ভ্যাকসিন সনদ বাণিজ্যের চক্র। ট্রাভেল এজেন্সির অফিস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা।
ফেক আইডি ব্যবহার করে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিচ্ছে অহরহ। ‘প্রবাসীদের ভ্যাকসিন দিতে সহায়তা করা হবে’ এমনটা বলে প্রচার চালায়। কেউ যোগাযোগ করলে তখন টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব আলাপ সরাসরি ফোনে না করে হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে করছে তারা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post