দুবাইয়ে লটারি জিতে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেন এক বাংলাদেশি প্রবাসী। গত ৯ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাতে অনুষ্ঠিত মাহজুজ লাইভ ড্রতে ১০ লাখ দিরহাম জিতেছেন তিনি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি।
তবে ভাগ্য আর একটু ভালো হলে সরাসরি শত কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন তিনি। কারণ, মাহজুজের ৪৬তম সাপ্তাহিক ড্রতে দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছেন ওই বাংলাদেশি। ড্রতে ছয়টি নম্বরের মধ্যে তার পাঁচটি নম্বর মিলে গিয়েছিল। আর মাত্র একটি নম্বর মিললে প্রথম পুরস্কার হিসেবে তিনি পেতেন পাঁচ কোটি দিরহাম বা ১১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার বেশি।
খালিজ টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাদের জানান, লটারিতে দ্বিতীয় স্থান জয়ের পর আবেগে-উত্তেজনায় তাৎক্ষনিকভাবে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে, ১০ লাখের মধ্যে কতগুলো শূন্য থাকে। যতদিন ধরে দুবাইয়ে আছি, থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে প্রতিটি দিরহাম বাংলাদেশে পাঠাতে হয়েছে আমাকে।’
কাদের আরও জানান, দেশে পাঠানো টাকায় যেন টান না পড়ে, সেজন্য ফোনে ইন্টারনেট সংযোগবাবদও নিয়মিত অর্থ ব্যয় করেন না তিনি। ‘গতরাতে যখন ওই ড্র অনুষ্ঠান লাইভ প্রচার হচ্ছিল, আমি নাইটশিফটে কাজ করছিলাম। ফোনে সেই অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ডাটা না থাকার কারণে বার বার বাফারিং হচ্ছিল।’
‘শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধুকে ড্রয়ের ফলাফল চেক করার অনুরোধ করি। সেই জানিয়েছে- দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছি আমি।’ দুই সন্তানের পিতা আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, পুরস্কার জেতার খবর শোনার পর প্রথমেই তার মনে পড়েছে স্ত্রীর কথা। নিজের স্ত্রীকে খুবই ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিসম্পন্ন নারী হিসেবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘টাকা পাওয়ার পর আমি প্রথমেই স্বর্ণের দোকানে যাব এবং তার জন্য কিছু স্বর্ণালঙ্কার কিনব। গত ১০ বছর ধরে দুবাই আছি, কিন্তু এতদিনে তাকে এক রতি স্বর্ণও উপহার দিতে পারিনি।’
নিঃস্বার্থ এই শ্রমিক আরও বলেন, পুরস্কারের টাকার একটা অংশ বাবা ও ভাইকে দেবেন, যারা গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক অর্থকষ্টে রয়েছেন। বাকি টাকা দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন এবং তা ভাড়া দেবেন। এক্ষেত্রে তার যুক্তি হলো- যদি একটি বাড়ি নির্মাণ করে তা ভাড়া দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি নিশ্চিত আয়ের উৎস তৈরি হবে।
পুরস্কারের অর্থের বাকি অংশ সন্তানদের শিক্ষার জন্য তুলে রাখা হবে উল্লেখ করে খালিজ টাইমসকে কাদের বলেন, ‘অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়ার পর স্কুল ছেড়ে দিয়ে কাজে নামতে হয়েছে। কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তানদের পরিণতিও আমার মতো হোক। লেখাপড়া শিখে তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়, এই টাকার একটি অংশ সেজন্য বরাদ্দ থাকবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post