বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আকস্মিক অভিযান দেখা গেছে, যা এর আগে ক্রীড়াঙ্গনে তেমন একটা দেখা যায়নি। দুদকের তিন সদস্যের একটি দল বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অভিযানের সময় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ উপস্থিত না থাকলেও, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন কার্যালয়ে ছিলেন।
দুদকের এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুই সহকারী পরিচালক আল আমিন ও মাহমুদুল হাসান এবং পরিদর্শক খলিলুর রহমান। অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, ‘বিভিন্ন ক্রিকেট লিগে, বিশেষ করে তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফায়িং পর্বে দল নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়েছে।’
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তৃতীয় বিভাগে দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে আবেদন বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি। সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, ‘আগে যেখানে ২-৩টি দল আবেদন করত, এ বছর ৬০টির বেশি দল আবেদন করেছে। পূর্বে আবেদন ফি ৫ লাখ টাকা থাকলেও, এবার তা কমিয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক আবেদন এবং আবেদন ফি কমানোর পেছনে কোনো গোপন লেনদেন বা সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি। স্থানীয় ক্লাব ও সংগঠকদের প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের প্রাথমিক ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিসিবির জমা দেওয়া নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এছাড়াও, টিকিট বিক্রিতে বিসিবির দেখানো আয় এবং প্রকৃত আয়ের মধ্যে বড় ধরনের গরমিল রয়েছে বলে দুদকের সন্দেহ। আল আমিন উল্লেখ করেন, ‘বিপিএলের তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত বিসিবি প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় দেখালেও, একাদশ আসরে শুধুমাত্র অনলাইন টিকিট বিক্রি করেই প্রায় ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এর অর্থ হলো, পূর্বে টিকিট বিক্রির তথ্য হয় গোপন রাখা হয়েছে, অথবা সেখানে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাৎের ঘটনা ঘটেছে।’
দুদক মুজিব শতবর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করেও একটি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছে। যেখানে ১৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেখানে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। তবে দুদকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকৃত ব্যয় ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ১৮ কোটির বেশি অর্থের কোনো স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায়নি। সহকারী পরিচালক আল আমিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘দুদক নিজস্ব সিদ্ধান্তে কোনো অভিযান চালায় না। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে কমিশনের অনুমোদনের পরই আমরা মাঠে নামি। বিসিবির ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। আজকের অভিযানে আমরা কেবল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি এবং বিসিবি আমাদের সহযোগিতা করছে। সংগৃহীত সবকিছু কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
দুদকের এই অভিযান প্রসঙ্গে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় বিসিবি সর্বদা সহযোগিতা করে এসেছে। দুদকের পক্ষ থেকে যে নথি চাওয়া হয়েছে, আমরা তা সরবরাহ করছি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দুদকের এই অভিযান ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই তদন্তের পর কী ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসে।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
