সোনার হরিণ ধরতে গিয়েছিলেন মিসরে। সেখানে চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাবেন এমন স্বপ্ন ছিলো তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। মিসরে যাওয়ার কিছুদিন পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বাদল মিয়া। চাকরি ছেড়ে ঘুরতে থাকেন রাজধানী কায়রোর বিভিন্ন রাস্তায়। এভাবেই কেটে যায় কয়েক বছর। এসময় বাদল মিয়া নিজেকে কখনো বাংলাদেশি, কখনো ভারতীয় বা শ্রীলঙ্কান বলে দাবি করেন।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বাদল মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পূর্বহাটি গ্রামে। মোহাম্মদ ইউসুফ নামে মিসরীয় এক ব্যক্তি কায়রোর বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোন করে বাদল মিয়ার খোঁজ দেন।
পরে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে দূতাবাসের শ্রম বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটে যান তার কাছে। তারা নিশ্চিত হন বাদল মিয়া বাংলাদেশের একজন নাগরিক। তিনি মিসরে আওয়াল গামাল নামক স্থানে অবস্থিত ডাইস পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। অনেক বছর আগে ছেড়ে দেন সেই চাকরি।
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা। কিন্তু বাদল মিয়া চিকিৎসা নিতে এমনকি দেশে আসতেও অস্বীকৃতি জানান। এরপর দীর্ঘদিন আর খোঁজ মেলেনি তার।
আরো পড়ুনঃ
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
যেভাবে সরকারি অনুদান পাবেন প্রবাসীরা
বিদেশে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন যেভাবে
দূতাবাসের শ্রম সচিব মুহাম্মদ ইসমাঈল হুসাইন বলেন, বেশ কিছুদিন পর আমরা আবার বাদলকে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পাই। এরপর তাকে জোর করে আল-আব্বাসিয়া মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে বাদলকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করতে হলে থানা বা আদালতের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসার সব খরচ বহন করতে হবে রোগীকে।
এরপর বাদলকে নিয়ে মিসরের আল-নুজহা থানায় গেলে সেখানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধু আসামি সংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতালকে সহযোগিতা করি, অন্য কোনো বিষয়ে নয়। শ্রম সচিব আরও বলেন, স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতালে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে বাদলের চিকিৎসার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতা চাই।
এসময় আইওএম কর্মকর্তা ড. হাতেম ও ইব্রাহিম বাদলের চিকিৎসা ও দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেন। অবশেষে মিসরে আসর-ঈল-মাদী নামক একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশেষ বিমানে করে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার একজন চিকিৎসকসহ বাদল তার জন্মভূমি বাংলাদেশে পথে রওনা দেন।
মিসরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বহু চেষ্টার পর একজন মানসিক রোগী বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিককে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, বাদলের বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম)।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post