শ্বশুরের হামাস সংশ্লিষ্টতাকে কারণ দেখিয়ে ভারতীয় এক পোস্ট ডক্টরাল গবেষক বদর খান সুরির বিরুদ্ধে ভিসা বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, তার সঙ্গে জ্ঞাত অথবা সন্দেহভাজন এক সন্ত্রাসী, হামাসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, দেড় দশক আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফ্লিক্ট স্টাডিজে পড়াশোনা করার সময় দিল্লি থেকে যাওয়া এক ত্রাণ বহরের সঙ্গে গাজায় যান সুরি। সেখানেই পরিচয় হয় মাফেজ সালেহর সঙ্গে।
মার্কিন নাগরিক সালেহ সেসময় গাজায় অনুবাদক ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরিচয় হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে করেন তারা। তাদের বিয়ের সংবাদ ভারতের গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সালেহর বাবা একসময় হামাসনেতা ইসমাইল হানিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। যদিও পরের দিকে তিনি গাজা সরকারের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং ২০১১ সালে শান্তি এবং সংঘাত প্রশমনে তাগাদা দিতে হাউজ অব উইজডম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন বলে আদালতে দেওয়া সালেহর জবানবন্দিতে বলা হয়েছে।
বিয়ের পর প্রায় এক দশক দিল্লিতে কাটানোর পর সুরি-সালেহ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সুরি ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দেন।
প্রায় তিন বছর ধরে ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত এ ভারতীয়কে সোমবার রাতে তার বাড়ির বাইরে থেকে আটক করা হয়।
কর্তৃপক্ষ ভিসা বাতিল করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিনপন্থিদের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল করা একাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে রঞ্জিনী শ্রীনিবাসন নামে এক ভারতীয় শিক্ষার্থীও আছে।
সুরির আইনজীবী জানিয়েছেন, আপাতত তিনি অভিবাসন আদালতের শুনানির তারিখের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সুরি বৈধভাবে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তার মার্কিন স্ত্রীর ফিলিস্তিন সংযোগের কারণেই এখন তাকে নিশানা বানানো হচ্ছে, ভাষ্য আইনজীবীর।
ত্রাণবহরের সঙ্গে যাওয়ার পর আর একবারই সুরি গাজায় গিয়েছিলেন, তাও নিজের বিয়েতে।
নম্রভাষী, লাজুক, কঠোর পরিশ্রমী সুরিকে আটক ও তার ভিসা বাতিলের ঘটনা ভারতে তার শিক্ষক ও সহপাঠীদের স্তম্ভিত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ওই ত্রাণ বহরের অন্যতম সংগঠক ফিরোজ মিথিবোরওয়ালা বলেন, “আমাদের আলোচনায় ও (সুরি) সবসময় সেক্যুলার অবস্থানই নিতো। সে কোনোভাবেই ডানপন্থি ঘরানার নয়।”
সুরির বাবার আশা শেষ পর্যন্ত আদালতে ন্যায়বিচার পাবে তার ছেলে।
“এই অভিযোগগুলো কেবল কথার কথা, একেবারেই ভিত্তিহীন। ও হামাস তো দূর বিয়ে ছাড়া ফিলিস্তিনের সঙ্গেও কোনোভাবে জড়িত নয়। তার অপরাধ একটাই—সে একজন ফিলিস্তিনি নারীকে বিয়ে করেছে,” বলেছেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post